যশোর: যশোরের কেশবপুর উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, লুটপাট ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হোসেনের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় চালানো ওই হামলায় তার ছয়জন সমর্থক আহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সরকার প্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কেশবপুরের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পাঁজিয়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র পালের বাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালানো হয়।
বিকাশ পাল দাবি করেন, তার গুদাম থেকে ২০০ বস্তা চাল, সাড়ে ৪০০ বস্তা সরিষার খৈল, ২৫০ বস্তা ভুসি এবং ২৫০ বস্তা আটা লুট হয়। এ ছাড়া নগদ ৯ লাখ টাকাও লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর বিকাশ পালের বাড়িতে যান বিএনপি নেতা আবুল হোসেন (আজাদ)।
এ বিষয়ে বিকাশ পাল আরও জানান, দুর্বৃত্তরা তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান লুট করেই ক্ষান্ত হয়নি, সোমবার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে আরও ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে নতুনহাট এলাকার রিপন নামের এক ব্যক্তি। পরে রিপন তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। বিষয়টি জানতে পেরে মঙ্গলবার রিপনকে ডেকে পাঠান আবুল হোসেন। তাকে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাঁজিয়া বাজার থেকে কেশবপুর শহরে রওনা হলে নতুনহাট মোড় এলাকায় রিপনের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন আবুল হোসেনের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে পেছন থেকে হামলা চালায়। এ সময় তার গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। আবুল হোসেনের দাবি, সামনের দিকের আসনে থাকায় তার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে গাড়ির পেছনে থাকা তার ছয়জন সমর্থক আহত হন। তাদের মধ্যে পাঁচজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা হলেন ইমরান, সোহান, লিটন, ইউনুস ও ইয়াসিন।
আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হামলা চালাচ্ছে। যত বাধা-ই আসুক না কেন, এই দুঃসময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সবার পাশে থাকব। ’
হামলার বিষয়ে জানতে রিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিএনপির ওই নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে উপজেলা বিএনপি। বুধবার দুপুরে উপজেলার থানা মোড় এলাকায় বিএনপির কার্যালয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ নিন্দা প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এর আগে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতন ও লুটপাট প্রতিহত করতে কঠোর বার্তা দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আতঙ্ক দূর করতে পাশে থাকার ঘোষণা দেন। পরে তিনি খুলনা বিভাগের অন্য জেলাগুলোও পরিদর্শন শুরু করেন। তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতন কঠোর ভাবে দমন করা হবে উল্লেখ করেন। এছাড়াও যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রয়াত তরিকুল ইসলাম পত্নী নার্গিস বেগম দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সুযোগ-সন্ধানীদের অপতৎপরতা রুখতে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২৪
ইউজি/আরএ