ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ভাদ্র ১৪৩১, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সব শ্রেণির মানুষ এসেছেন শহীদী মার্চে

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
সব শ্রেণির মানুষ এসেছেন শহীদী মার্চে

ঢাকা: গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মিজানুর রহমান। ছেলের গুলিবিদ্ধ ছবি নিয়ে ছাত্র-জনতার শহীদী মার্চে যোগ দিয়েছিলেন বাবা মুজিবুর রহমান।

ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে মুজিবুর রহমানের মতো একাধিক শহীদ পরিবারের সদস্য, রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবী অংশ নিয়েছেন। ছাত্র-জনতার এই মিছিল প্রায় এক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।

সারা বিকেল ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মার্চে অংশ নিয়েছেন। ছিলেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও।

দুটি রিকশায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ খালি গলায়, কেউ হ্যান্ডমাইকে স্লোগান দিয়েছেন। তাদের মূল স্লোগান ছিল- ‘আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি।

মিছিলের মাঝে মাঝে শেখ হাসিনার বিচার চেয়েও স্লোগান দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক গণহত্যায় শহীদদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের শহীদদেরও স্মরণ করেছে ছাত্র-জনতা। শিক্ষার্থীদের সারির মাঝখানে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের বড় পতাকা স্থান করে নিয়েছে। শত শত শিক্ষার্থী দেশের পতাকা উড়িয়েছেন। অনেকের মাথায় বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকাও দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ শহীদদের নাম ও ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন।   ‘শহীদদের হত্যার বিচার চাই’, ‘আত্মকর্মসংস্থানমূলক শিক্ষাব্যবস্থা চাই’সহ নতুন সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রত্যাশাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।

শহীদদের স্মরণে মার্চে যোগ দিয়েছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজির শিক্ষার্থী হাসিব আহমেদ ইমন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক মাস আগেও আমাদের স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ ছিল না। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেলাম। তাদের স্মরণে আমরা জড়ো হয়েছি।

শহীদী মার্চে অংশ নেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ড. সাদিক হোসেন। তিনিও বলেন, আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবচেয়ে বড় ছিল। যাদের জন্য এই মত প্রকাশ করতে পারছি, তাদের স্মরণে এখানে এসেছি।

জামেয়া মাদানীয়া বারিধারা মাদরাসার শিক্ষার্থী শহীদুল্লাহ্ মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনার বিচার করা হোক। যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হোক।

বরিশাল থেকে মার্চে অংশ নিয়েছেন মো. হেদায়েতুল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা শহীদদের ভুলিনি। আমরা ফ্যাসিবাদ ভুলিনি।

শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বন্ধুদের সাথে নিয়ে এসেছেন ঢাকা সিটি কলেজের দ্বাদশ শিক্ষার্থী মাশফি মিশন মল্লিক। তিনি বলেন, আজ ভয়-সংকোচহীন আমরা কথা বলতে পারছি। এর থেকে বড় কিছু নেই।

যাত্রাবাড়ির দারুল উলুম মাদানিয়া মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, আমরা এখনো শহীদদের বিচার পাইনি। সে বিচার আমরা চাই।

মার্চে যোগ দিয়েছেন চাকরিজীবী আব্দুস সালামও। তিনি বলেন, ছাত্ররা আমাদের জন্য একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। তাদের কোনো আন্দোলন বৃথা যায়নি। তাদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে এখানে এসেছি।

শেখ হাসিনা সরকার ও ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের একমাস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শহীদী মার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের মার্চটি নীলক্ষেত, কলাবাগান, সংসদ ভবন মোড়, ফার্মগেট কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
এফএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ