ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শরৎ মানেই প্রকৃতি, নদের তীরে কাশফুলের সাদা হাসি

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪
শরৎ মানেই প্রকৃতি, নদের তীরে কাশফুলের সাদা হাসি

মাদারীপুর: প্রকৃতিতে এখন ঋতুরানী শরৎ। ভাদ্র ও আশ্বিন দুই মাস মিলে বাংলা ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু এই শরৎকাল।

প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটলেও শরৎকাল ধরা দেয় তার আলাদা রূপ-বৈচিত্রে। শরৎ এলেই নদ-নদীর পাড়ে ফুটতে শুরু করে কাঁশফুল। এই কাশফুলের শুভ্র হাসিই জানান দেয় শরৎ এসেছে। ভ্যাপসা-অস্বস্তিকর গরমের অবসান ঘটিয়ে আসছে শীত!। তাই কাশফুল আর শরৎকাল যেন মিলেমিশে একাকার।  

কাশফুলের সৌন্দর্য দোলা দেয় মানুষের মনেও। আর এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মানুষ ছুটে আসেন নদ-নদীর পাড়ে, বালুর চরে ফুটে থাকা কাশবনে!।

মাদারীপুর জেলার শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়েই বিস্তীর্ণ বালুর চরে ফুটতে শুরু করেছে কাশফুল। দূর থেকে দেখে মনে হয় সাদা মেঘ নেমে আসছে মাটিতে!।  

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নদের পাড়ে প্রতি বছরই কাশফুল ফোটে। তবে দিন দিন কাশফুলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ফুল কম। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর আড়িয়াল খাঁ নদ খনন করে বালু নদের পাড়ে জমা রাখে। এতে করে মূল জমি ঢাকা পড়ে যায়। এবার ওই বালুর মধ্যেই কাশফুলের গাছ জন্মেছে। তবে পরিমাণে কম। এজন্য ফুলও কম দেখা যাচ্ছে। তারপরও নদের পাড়ে যেন সাদা ফুলের মেলা। বিকেল হলে অনেক লোকজন আসে এটা উপভোগ করতে। কাশফুলের সঙ্গে ছবি তোলে, ঘুরে বেড়ায় তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় বহুবর্ষজীবী এক ধরনের ঘাস। এরা উচ্চতায় তিন থেকে ছয় ফুটেরও বেশি হয়। ছনের কচি পাতা গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবেও পরিচিত। নদ-নদীর পাড়, জলাভূমি, চরাঞ্চল ছাড়াও রুক্ষ এলাকাতেও কাশ জন্মে। তবে নদ-নদীর পাড়ে এদের বেশি দেখা যায়। নদীর তীরে পলি মাটির স্তর থাকায় খুব সহজেই এর কাশের মূল সম্প্রসারিত হয়।  

মাদারীপুর জেলার শিবচরের পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদের চর এলাকার, পৌর এলাকার উপশহর, রেললাইনের পাড় ঘেঁষে প্রচুর পরিমাণে কাশ জন্মে। শরতে ফুল ফুটলে মোহনীয় সৌন্দর্যে রূপ নেয় এসব এলাকা।  

স্থানীয় কৃষকেরা জানায়, কাশের পাতা এবং ফুলের ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কচি পাতা শুকিয়ে পানের বরজের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অনেকে শৌখিনভাবেও ঘরের ছাউনিতে কাশপাতা ব্যবহার করে।

শিবচরের উৎরাইল নদের পাড়ে ঘুরতে আসা ইশরাত জাহান নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, কাশফুলের সৌন্দর্য দেখতে নদীর পাড়ে ছুটে আসা। আগে পদ্মার পাড়ে প্রচুর কাশফুল ফুটতো। নদী ভাঙনে এখন খুব একটা দেখা যায় না। আড়িয়াল খাঁর পাড়ে এখন কাশফুলের দেখা মিলে। খুব ভালো লাগে। কাশফুল মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল!।

নাজমুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, বিকেলে নদীর পাড়ে, ব্রিজে লোকজন ঘুরতে আসে। এখানে বাতাস থাকায় বেশ ভালো লাগে। আর এখন কাশফুল ফুটতে শুরু করেছে। এর সৌন্দর্য অন্যরকম। বেশ ভালো লাগে।

শরতের প্রকৃতি বলতে ঝকঝকে নীলাকাশে ছোপ ছোপ মেঘের ভেসে বেড়ানো, মৃদু-মন্দ বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কথা থাকলেও ইদানীং আর তেমনটা মিলছে না। গত কয়েকদিন আগে টানা বৃষ্টিপাতের পর এখন আবার ভ্যাপসা গরম। মাঝে মধ্যে আকাশে মেঘলাভাব। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া প্রকৃতিতে এই শুভ্র কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরৎ এসেছে। পৃথিবীর চারটি প্রধান ঋতুর একটি হচ্ছে শরৎকাল। উত্তর গোলার্ধে সেপ্টেম্বর মাসে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ মাসে শরৎকাল গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মধ্যবর্তী ঋতু হিসেবে আগমন করে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।