ঢাকা, বুধবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গণত্রাণ কর্মসূচির স্বচ্ছ অডিট প্রকাশ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৪
গণত্রাণ কর্মসূচির স্বচ্ছ অডিট প্রকাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): গণত্রাণ কর্মসূচির অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে আর্থিক কোনো অসঙ্গতির তথ্য পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক পিকেএফ ইন্টারন্যাশনালের আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসের অডিটর গোলাম ফজলুল কবির।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদারসহ প্রমুখ।

চলতি বছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ কর্মসূচির আর্থিক লেনদেন অডিট করেছে এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ১০ সেপ্টেম্বর অডিট কার্যক্রম শুরু করে মঙ্গলবার প্রতিবেদন দিয়েছে।

অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তহবিলে ২১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে তারা ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেছেন।

ব্যয়ের পর ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা তহবিলে অবশিষ্ট রয়েছে। এই টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজুর আর রহমান, সমম্বয়ক লুৎফর রহমান ও শিক্ষার্থী মো. ফরিদ উদ্দিনের যৌথভাবে খোলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে।

অসচ্ছতা পাওয়া যায়নি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ কার্যক্রমের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে গত কয়েকদিন থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এই ত্রাণ কার্যক্রমে আর্থিক অস্বচ্ছতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গোলাম ফজলুল কবির।

তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো তথ্য পাইনি যা দেখে বলা যায় যে তারা অস্বচ্ছ ছিল। তারা স্বচ্ছ ছিল। আমরা অডিটররা যে প্রতিবেদন করেছি, তা তারা মেনে নিয়েছেন।

ত্রাণের টাকার ৮ কোটি যাবে পুনর্বাসনে
গণত্রাণ কর্মসূচিতে সংগৃহীত ৮ কোটি টাকা বুধবার দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন তহবিলে হস্তান্তর করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বাকি টাকা উত্তরবঙ্গের বন্যাদুর্গত এলাকায় ব্যয় করা হবে বলে জানান সমম্বয়ক ও জাতীয় বন্যা পুনর্বাসন কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান।

তিনি বলেন, আমরা ত্রাণ কার্যক্রম শেষ করার দিনই সংবাদ সম্মেলনে বলেছি আমরা পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করব। সে কারণে আমরা বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া অন্যান্য যারা বিশেষজ্ঞ আছে তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। এরপর আমরা ফিল্ড ওয়ার্ক শেষ করেছি। আলোচনার মাধ্যমে আমরা অবশিষ্ট টাকা দুইভাবে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারমধ্যে ৮ কোটি টাকা বুধবারের মধ্যে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন তহবিলে হস্তান্তর করা হবে। সেখান থেকে পুনর্বাসন কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সব জেলায় প্রতিনিধি দিয়েছি। এছাড়া আমাদের বন্যা পুনর্বাসন কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ তদারকি করবে। বাকি টাকা বর্তমানে উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা ব্যয় করব।

আবু বাকের মজুমদার বলেন, এত বড় একটি কার্যক্রম পরিচালনার মত লজিস্টিকাল সাপোর্ট আমাদের নেই। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তা রয়েছে। তারাও আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে। ঢাকাস্থ স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বন্যাদুর্গত স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব।

অবশিষ্ট টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি আর্থিক হিসেব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে মোট ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা আয় ও ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা ব্যয়ের হিসেব দেওয়া হয়। সে হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে অবশিষ্ট ছিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা। কিন্তু অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবশিষ্ট রয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা।

অবশিষ্ট টাকার এই অমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের পূর্বের হিসেব চার তারিখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এরপরও আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে টাকা এসেছে, যেগুলো অডিটে যোগ হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো চেক এসেছিল যেগুলো আমরা ক্যাশ করাতে পারিনি। সেগুলো ক্যাশ করার পর এখানে যুক্ত করা হয়েছে। অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চেক দিয়েছেন, কিন্তু তখনও এই নামে আমাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না।

তিনি বলেন, এছাড়া অনেকে গয়না দিয়েছেন, যেগুলো আমরা বিক্রি করে টাকা পেয়েছি। টিএসসিতে ত্রাণ কার্যক্রমের পর থেকে যাওয়া কার্টন এবং অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির টাকা যোগ হয়েছে। এছাড়া এক বস্তার মতো কয়েন ছিল, যেখানে প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি হয়েছে। এগুলো আগে গণনা করা যায়নি। এসব কারণে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ৩০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন, কিন্তু অ্যাকাউন্ট না থাকায় আমরা সেটি তুলতে পারিনি।

সারজিস আলম বলেন, আমরা চাইলে শুরুতেই একটি অডিট রিপোর্ট করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে স্বচ্ছতা নিরূপণ করা যেত না। আমরা কার্যক্রম শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই অডিট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সময় নিয়ে কাজটি করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৪
এফএইচ/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।