সিলেট: পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই রেহেনা বেগমকে (২২) হত্যা করেছেন তারই স্বামী নাজির উদ্দিন (২৫)। রেহেনাকে হত্যার পর নাজির পালিয়েছিলেন চট্টগ্রামে।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ সাইফুর রহমানের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নিহতের স্বামী নাজির।
জবানবন্দি নেওয়া পর বিচারক নাজিরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নিহত রেহেনা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাহাদুরপুর আমবাড়ি গ্রামের চেরাগ আলীর মেয়ে। তার স্বামী নাজির একই উপজেলার মুন্তাজপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। নাজির সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালারগাওয়ে জাহিদুর রহমানের বাড়িতে থেকে কৃষি-কাজ করতেন।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে দক্ষিণ সুরমার লালারগাঁওয়ের একটি জলাশয় থেকে অজ্ঞাতপরিচয়ে রেহেনার মরদেহ উদ্ধার পুলিশ। রেহেনার পরনে ছিলো সাদা রঙের সালোয়ার-ছাপার কামিজ ও মেরুন রঙের বোরকা। পরিচয় শনাক্তের পর নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) খালিদ উজ জামান বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটির ছায়া-তদন্তে নেমে সোমবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে আসামিকে চট্টগ্রামের পাচলাইস থানাধীন মোহনা-২ এলাকার একটি ভবন থেকে গ্রেফতার করে। আসামির কাছ থেকে রেহেনার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটিও জব্দ করা হয়। আসামি গ্রেফতারের পর মামলাটির পূর্ণ তদন্তভার নিয়েছে পিবিআই।
আদালতে নাজিরের জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ৬/৭ বছর আগে নাজির ও রেহেনার বিয়ে হয়। এরমধ্যে ৩ বছর আগে তাদের ঘর আলো করে আসে একটি পুত্র সন্তান। ৭ মাস মাস আগে রেহেনা সৌদিআরবে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকাবস্থায় টাকা পাঠাতেন তার বাবারবাড়িতে। টাকা পাঠানো নিয়ে নাজির ও রেহেনার মধ্যে মনোমালিন্য ছিলো। দেশে আসার পর রেহেনা স্বামীকে নিয়ে সংসার করতে অনিচ্ছা পোষণ করেন। এরপরও তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন নাজিরের বাবা-মা। কিন্তু তাদের অপমান করে ফিরিয়ে দেন রেহেনা। এরপর যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ব্যক্তিকে দিয়ে মোবাইলে স্বামীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন রেহেনা। ওই ব্যক্তি নাজিরকে বলেছিলেন, ‘তোর বউ এখন আমার কাছে। ’ এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হতে থাকেন নাজির। বাবা-মায়ের অপমানের শোধ তার মধ্যে কাজ করে।
তিনি বলেন, রেহেনা প্রায়ই সিলেট যাতায়াত করতেন। একপর্যায়ে রেহেনা ফোন দিয়ে টাকা লাগবে বলে স্বামীকে জানান। সে সুযোগ নেন নাজির। ঘটনার দিন গত ১৩ নভেম্বর স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিতে সিলেটে আসেন রেহেনা। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টায় নগরের হাসান মার্কেটের সামনে রাস্তার পাশের একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করেন। এরপর রেহেনা টাকা চাইলে নাজির বলেন, টাকা নিতে লালারগাঁওয়ে যেতে হবে। নগরের দক্ষিণ সুরমা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় লালারগাঁওয়ে যান। সেখানে রাস্তার পাশে নেমেই ওই ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বলছিলেন রেহেনা। এ সময় সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে স্ত্রীকে পানিতে ফেলে চাপা দিয়ে হত্যা করেন নাজির। এরপর তিনি চট্টগ্রামে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপনে থাকেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২০
এনইউ/এএটি