রাজশাহী: রাজশাহীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। কয়েক মাসের বিরতি দিয়ে হু হু করে আবারও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ।
সরকার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কর্মসূচি শুরু করলেও রাজশাহীতে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ফ্রি মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও মানুষজনকে মাস্ক পরানো যাচ্ছে না।
বার বার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলেও রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে সাধারণ মানুষকে দায়িত্বশীল করা যাচ্ছে না। বাড়ির বাইরে বের হয়ে অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশে নির্দ্বিধায় যোগ দিচ্ছেন। কারো মধ্যেই কোনো বিকার নেই।
কোনো অনুষ্ঠানেই সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। এই অবস্থায় মাঝে-মধ্যে নয়, আগের মতো প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি উঠেছে। না হলে রাজশাহীতে এবার করোনা পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- বিভাগের আট জেলায় বুধবার (২৫ নভেম্বর) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩৩৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিভাগে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ২৬৮ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও দুই হাজার ৫৯৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী।
জানতে চাইলে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগ ও হাসপাতালের বর্হিবিভাগের দুটি পিসিআর ল্যাবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিদিন দুই ল্যাবে ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও নওগাঁ জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এই দুই ল্যাবে।
বর্তমানে শীত বাড়তে শুরু করায় করোনার সংক্রমণও বাড়তে শুরু করেছে। মানুষকে প্রতিদিনই মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়াসহ পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আহ্বান জানানো হচ্ছে। এরপরও মানুষ সচেতন না হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন সিভিল সার্জন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. এনামুল বলেন, করোনা রোগীর চিকিৎসায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতাল ও রাজশাহী সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালকে ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু রোগী কমে যাওয়ায় কিছুদিন আগে দুটি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু রামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে আবারও হাসপাতাল বাড়ানো হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় গতবারের চেয়ে বেশি সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। করোনা রোগীর জন্য রাজশাহীর আট জেলায় বর্তমানে এক হাজার ২৮৭ বেড প্রস্তত রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি জটিল হলে প্রয়োজনে আরও বেড বাড়ানো হবে।
রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য বর্তমানে পাঁচটি ল্যাব রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে দুটি, বগুড়ায় দুটি ও সিরাজগঞ্জে একটি ল্যাব রয়েছে। পাঁচটি ল্যাবে প্রতিদিন ৯৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। তাই রোগী বাড়লেও শনাক্তকরণ পরীক্ষা নিয়ে আর বেগ পেতে হবে না বলে উল্লেখ করেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল বলেন, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বাস্তবায়নে মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাস্ক না পরার অপরাধে জরিমানা করা এবং ফ্রি মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এরপরও মানুষ সচেতন না হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামীতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
এসএস/এমজেএফ