ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কে এই টর্নেডো আশিক?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২১
কে এই টর্নেডো আশিক? আশিকুল ইসলাম আশিক ওরফে টনের্ডো আশিক

ঢাকা: কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি অপরাধী চক্রের মূলহোতা ছিলেন আশিকুল ইসলাম আশিক ওরফে টনের্ডো আশিক। চক্রে তাঁর নিয়ন্ত্রণে ৩০-৩৫ জন সদস্য কাজ করতেন।

পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি।  

এর আগে আশিক (২৯) অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু তাঁর অপরাধ কার্যক্রম থামেনি।

সম্প্রতি কক্সবাজারে একটি হোটেলে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে নারী পর্যটককে ধর্ষণ করেন আশিক। ভুক্তভোগী ও তাঁর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ওই পর্যটক নারী। এই ঘটনার পরের দিন ২৩ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে চারজন নামধারী ও অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিনজনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা (নম্বর-৪৩/৭৫০) দায়ের করেন।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার প্রধান আসামি টর্নেডো আশিককে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১৫ ও ৮-এর টিম।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর কক্সবাজারে দুই দিন আত্মগোপনে থাকার পর পটুয়াখালীতে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন আশিক। পরে একটি এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করে পটুয়াখালীতে যাওয়ার সময় মোস্তফাপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।  

তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী র‌্যাব-১৫-এর কাছে সহায়তা চান। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে জিম্মি করার সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা মূলত বিত্তবান পর্যটকদের কাছে অর্থ সাহায্য চাইতেন। এ সময় ওই নারী অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিক ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লাবনী বিচ এলাকার রাস্তা থেকে ভুক্তভোগী নারীকে সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার আশিক ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রাখেন।

পরে ভুক্তভোগীর স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন মিডিয়াতে জানাজানি হলে আশিক আত্মগোপণে চলে যান। এরপর বেশভূষা পাল্টে তিনি দুই দিন কক্সবাজারে আত্মগোপন করেন। পরে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার টর্নেডো আশিক পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম দখল ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকেন। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবি করে থাকেন। তাঁর চক্রের সদস্যরা রাতে সমুদ্র সৈকতে আসা পর্যটকদের হয়রানি, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করতেন। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন পর্যটকদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতেন।  

আশিকের নামে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। পুলিশ তাঁকে পাঁচবার গ্রেফতার করে। দীর্ঘদিন তিনি কারাভোগ করেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২১
এসজেএ/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।