কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে চারদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। যতদূর দেখা যায় শুধু পানিই চোখে পড়ে।
ব্রহ্মপুত্র নদের অভ্যন্তরে এমনি একটি চরের নাম পোড়ার চর। এখানে বন্যায় তলিয়ে গেছে সব। যার কারণে নৌকায় আশ্রয় নেওয়া ৮৭ পরিবারের নারী ও তরুণীরা শৌচকর্ম সারা নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। এদিকে দেখা দিয়েছে শিশুদের খাবারের অভাব। এ সংকটে এখন মায়ের বুকের দুধই একমাত্র ভরসা।
শৌচাগারগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাতের আঁধার নামার অপেক্ষায় থাকতে হয় এখানকার নারীদের। বন্যার পানিতে গোসল ও শৌচকর্ম সারায় স্বাস্থ্যগত সমস্যার ভয়ে রয়েছে তারা। তাই দ্রুত ভাসমান টয়লেটের ব্যবস্থা করাসহ মেয়েদের পিরিয়ডকালীন সময়ে ব্যবহারের জন্য ন্যাপকিন ও হাইজিন কিট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
সরেজমিনে পোড়ার চরে গিয়ে দেখা যায়, ঘর ডুবে যাওয়ায় স্বামী-সন্তান নিয়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন দু’সন্তানের মা রাশেদা বেগম (৩০)। শৌচকর্ম সারা নিয়ে কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাশেদা বাংলানিউজকে বলেন- একদিন খাওন না হইলেও থাকা যায়, কিন্তু বাথরুম না সাইরা থাকোন যায় না। দিনের বেলায় কোনো উপায়ই থাকে না, চাপ আসলে কষ্ট কইরা থাকতে হয়। আন্ধার হওয়ার অপেক্ষায় থাকোন লাগে।
এ সময় ময়না বেগম (২৫) নামে এক নারীকে কোলের শিশু সন্তানের কান্না থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। কথা হলে তিনি বলেন, বাড়ি ঘর ডুইবা যাওয়ায় বাচ্চাটারে গরুর দুধ দিবার পারিনা। আমরাই শুকনা খাবার খাইতাছি, তাই বুকের দুধও কম পায়। যারা সাহায্য করতাছে তারা তো শিশুদের লাইগা কিছু দেয় না।
পোড়ার চরের এনজিও পরিচালিত ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী শাপলা খাতুন বাংলানিউজকে বলে, তাদের চরটিতে ২০-২২ জন তরুণী রয়েছেন। বন্যার কারণে তারা স্যানিটারি ন্যাপকিন সংকটে রয়েছেন। তাই ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার ভয় রয়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে চরের শৌচাগারগুলো তলিয়ে গেছে। নারী ও উঠতি বয়সের মেয়েরা পড়েছে চরম বিপাকে। তাই পানিতে তলিয়ে থাকা চরগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ভাসমান শৌচাগারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবারহের জন্য নলকূপ স্থাপন, পুরাতন নলকূপ মেরামত ও অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা ছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবারহ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার্ত এলাকায় শিশু খাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চরের যেসব শৌচাগার তলিয়ে যায়নি সেগুলো ব্যাবহারসহ প্রয়োজনে নৌকায় করে পাশের উঁচু চরে গিয়ে শৌচকর্ম সারতে বলা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে উচু স্থানে শৌচাগার নির্মাণ, নলকুপ স্থাপন, মেরামত, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও হাইজন কিট সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শতাধিক কাটুন হাইজিন কাপড় ও স্যানেটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যার্ত নারী ও তরুণীদের জন্য স্যানেটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় কম। তবে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এফইএস/জেডএ