ঢাকা : চলমান ভাদ্রমাসে শরতের হাওয়া গায়ে লাগার কথা থাকলেও দেশে তার ছিটেফোঁটাও নেই। এর ওপর দৈনন্দিন তীব্র যানজট।
রোববার (২১ আগস্ট) রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, মহাখালী, নতুন বাজার এলাকা ঘুরে নাগরিকদের ওষ্ঠাগত অবস্থা চোখে পড়েছে। অসহনীয় গরমে গণপরিবহনগুলোয় দেখা মিলছে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ, তিনগুণ যাত্রী পরিবহন করছে বাস চালকরা। সড়কের অব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। নারকীয় এ অভিজ্ঞতা অসুস্থ করে দিচ্ছে সাধারণ জনগণকে।
স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে মালিবাগ থেকে গুলশান মা ও শিশু হাসপাতালে যাবেন বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদুল ইসলাম। প্রখর রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা দুজন। কাছে গিয়ে হাল-হকিকত জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, মালিবাগ থেকে মধ্যবাড্ডা আসতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। একে তো গরম, তার ওপর যানজট। স্ত্রী অসুস্থ, আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
মহাখালী থেকে গুলিস্তান যাবেন ষাটোর্ধ জয়নাল আবেদিন। যে বাসে তিনি ওঠেন তাতে চড়েন বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক। জানতে চাইলে জয়নাল তাকে বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে কাজ করি। একটা মিটিং আছে গুলিস্তানে। ঠিক টাইমে যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। মহাখালী থেকে আড়াই ঘণ্টায় মগবাজার আসলাম। যানজট আর কোনদিনে কমবে বলে মনে হয় না। বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউমার্কেট, পল্টন, গুলিস্তান, মহাখালী, বিজয় সরণির মতো এলাকায় প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে গড়ে এক-দেড় ঘণ্টা সময় লাগছে। এর কারণ হিসেবে এ রুটগুলোয় চলাচলকারী যাত্রীরা বলেন, রাস্তায় যে জ্যাম লেগেছে এর ৭০ শতাংশ গণপরিবহনের সৃষ্টি। বাসের চালকদের কারণে জট সৃষ্টি হয়। ৩০ শতাংশ জট লাগে রিকশা ও ট্রাফিক পুলিশের অসচেতনতার কারণে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব চোখে দেখে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তারা অন্ধ।
যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা পরিবহণের বাসচালক রাইসুদ্দিন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, টানা তিনদিন ছুটির পর আজ থেকে অফিসগুলো চালু হয়েছে। তাই যানজট বেড়েছে। যাত্রীদের চাপও আছে।
আরও কয়েকটি বাস চালকের সঙ্গে কথা বলে তাদের যাত্রীদের ক্ষোভ সম্পর্কে জানানো হলে তারা বলেন, আমরা বাস চালাই, মালিক যেভাবে নির্দেশ দেয় সেভাবে। নিয়ম না মানলে পুলিশ মামলা দেয়; জরিমানা করে। এভাবেই তো চলছে।
নগরে যানজটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনগণ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রোববার ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি; কিন্তু অনুভূত হচ্ছে ৪১ ডিগ্রির মতো। এ ব্যাপারে সরকারকে দোষ দিতে না পারলেও তারা বলছেন লোডশেডিংয়ের কথা। নিয়ম মেনে লোডশেডিং করার কথা থাকলেও তা পালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
সড়কে চলাচলকারীরা গরমের কারণে ভিড় জমাচ্ছেন পানীয় বিক্রির দোকানে। জানতে চাইলে স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্র বলেন, গরমে শরীরের বাইরের দিকে আরাম দিতে না পারলেও ভেতরে তো প্রশান্তি মেলে, তাই পানি ও পানীয়তে ভরসা। বিষয়টি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো।
বিভিন্ন সময় যানজট থেকে নিস্তার মিললেও গরম থেকে এত সহজে মিলছে না। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে তাপদাহ আরও বাড়বে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
এমন পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোক ও গরমজনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে প্রচুর পানি ও স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
এমকে/এমজে