ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা: শেখ হাসিনা

ঢাকা : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সহায়তায় নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ড হয়েছিল।

রোববার (২১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ আগস্ট নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা শেষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ওই ঘটনার ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভাটির আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।

শেখ হাসিনা বলেন, কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ জাতীয় ঘটনা ঘটতে পারে না। লক্ষ্যটা ছিল আমাকেই হত্যা করা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের; মানে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা।

বিএনপি সরকারের জড়িত থাকার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, তৎকালীন দিনগুলোয় তারা অফিস-মিটিং করতে পারতেন না। সব সময় পুলিশ ঘিরে রাখতো। কিন্তু ঘটনার দিন পুলিশ ছিল না। শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিএফআই’র একজন অফিসার বোধহয় বিষয়টা (ষড়যন্ত্রের) জানতো না। সে হেডকোয়ার্টারে ফোন করেছিল যে এখানে এরকম ঘটনা হচ্ছে। তাকে ধমক দেওয়া হয়েছিল, তুমি এখানে বসে কি করছ? তোমার ওখানে কোনো দায়িত্ব নাই, তুমি ওখান থেকে সরো। তার মানে কি?

সে সময়কার বিএনপি সরকার আহতদের উদ্ধারের পাশাপাশি আলামত সংরক্ষণ না করে উল্টো কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন সরকার প্রধান। আক্রমণকারীরা যাতে জনরোষে না পড়ে সরে যেতে পারে স ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, যখন দেখল আমি মরি নাই- তখন ওই খুনিদের কয়েকজনকে সেদিন রাতেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে করে বিদেশে পাঠিয়ে দিল। আলামতগুলো ধ্বংস করতে সিটি কর্পোরেশনের পানির গাড়ি এনে রাস্তা ধোয়া শুরু করল। গ্রেনেডগুলো কোথায় পড়েছিল সেগুলো চিহ্নিত করার জন্য আমাদের তরফ থেকে লাল পতাকা টানানোর ব্যবস্থা করা হলো; কিন্তু সেখানে বাধা এলো। ধুয়ে মুছে তারা সাফ করে ফেলল সব আলামত।

গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়েছিল বলেও আলোচনা সভায় অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ছিল না। আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকরাই সেদিন সেবা দিয়েছিল। বিএনপি পন্থী কোনো চিকিৎসককে সেদিন পাওয়া যায়নি।

সভায় বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তথ্য সামনে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, আজকে গুম খুনের কথা বলেন। আমি তো মনে করি আমাদের আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার যাদের জিয়ার আমলেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর যত অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে সকলকে সামনে নিয়ে আসা দরকার।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কারও কারও চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে, পিটিয়ে মেরেছে। হাত কেটে ফেলা, বাড়ি দখল; পাকিস্তানি হানাদাররা যেভাবে অত্যাচার করেছে ঠিক সেভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার হয়েছে। অর্থাৎ আমাদেরকে একেবারেই নিঃশেষ করে দেবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলে লাশ টানা, বোমাবাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আমাদের প্রতিদিনের কাজ ছিল। এইভাবেই তারা আমাদের অত্যাচার করেছিল।

আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ভয়াল ২১ আগস্ট প্রাণে বেঁচে যাওয়া বিরোধী দলের প্রধান শেখ হাসিনা।

সকালে সাড়ে দশটা ২৯ মিনিটে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। সাড়ে দশটার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। আহতদের অনেকে এখনও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিনটার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বাংলাদেশ সময় : ১৫৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
এমইউএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।