ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

‘লাইফ সাপোর্টে’ চলছে পুঁজিবাজার

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৮
‘লাইফ সাপোর্টে’ চলছে পুঁজিবাজার

ঢাকা: আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারে চলছে দরপতন। এই দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে ‘পুঁজি হারানোর’ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

এছাড়া কৌশলী প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ না করে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়োগ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার টালবাহানা।

এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক একটাই ‘শেয়ারের দাম আরো কমবে’, তাই ‘এখন বিনিয়োগ করলেই ক্ষতি হবে’। এসবের ফলে বিক্রেতার তুলনায় কমেছে ক্রেতা, এতে শেয়ারের দামও দিনদিন কমছে। এ কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই থেমে থেমে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। তবে পুঁজিবাজারের এই দরপতন থামাতে সবশেষ সপ্তাহে সরকার ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘লাইফ সার্পোট’ দিয়ে বাজার চাঙ্গা রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।

এর ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইতে দুই কার্যদিবস সূচক পতন আর তিন কার্যদিবস উত্থানের মধ্য দিয়ে পার করেছে। পুরো সপ্তাহের দিনগুলোতে লেনদেন শুরু হয় সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়, কিন্তু দিনের শেষ ঘণ্টা লেনদেন হয়েছে নিন্মমুখী প্রবণতায়।

এ বিষয়ে লংকা বাংলা সিকউরিটিজের বিনিয়োগকারী সুবল কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজার সহসাই ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার কারণ ব্যাংক খাতে এখন চলছে তারল্য সংকট, এই সংকট ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মার্চেন্ট ব্যাংকসহ পুঁজিবাজারে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর আমানত-ঋণের অনুপাত কমানোর ফলে ঝুঁকি ছাড়াই ডিপোজিট রেখে মুনাফা বেশি পাওয়ার পুঁজিবাজার ছেড়ে ব্যাংকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার পর্যালোচনা দেখা গেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি টানা সাত কার্যদিবস পর্যন্ত দরপতন হয়েছে। এই দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি) দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে চিঠি দেয়। এরপর ডিএসই-সিএসই, ডিবিএ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ডিএসইর শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিরা জরুরি বৈঠকে বসেন।

বৈঠক শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর এমডি কেএএম মাজেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুঁজিবাজারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থের উৎসে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো। সেগুলো অত্যন্ত সাময়িক। আমরা আশা করছি শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারা দ্রুতই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং আশা করছি বাজারে এর পজেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে।

এরপর দিন বাজারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বলেন, যেকোনো মূল্যে পুঁজিবাজার যেনো ভালো থাকে।

তারপর গত সপ্তাহে টানা তিন কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। ওই তিনদিন সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) প্রথম সারির অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান (ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক) শেয়ার কিনে মার্কেট সার্পোট দিয়েছে। ফলে দরপতন থেমেছে। বেড়েছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এই সার্পোটকে ‘লাইফ সার্পোট’ বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মানি মার্কেটে টাকা নেই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নেই। পুঁজিবাজার কীভাবে ভালো থাকবে?

ডিএসইর সদস্য এনকোর সিকিউরিটিজের সিইও সাইফুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন ‘গুমট’। আর্থিকখাতে চলছে চরম অনিয়ম। এই সময়ে নতুন করে যারা বিনিয়োগ করছেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে কেউ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন না। আশা ছিলো নির্বাচনের বছর বাজার ভালো থাকবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো।

বিনিয়োগকারীর পুঁজি দেড় হাজার কোটি টাকা নেই

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৮
এমএফআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।