ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বৃষ্টিভেজা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে-২

প্রতি ধাপেই হাঁটু বাড়ি খেলো মগজে

জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৫
প্রতি ধাপেই হাঁটু বাড়ি খেলো মগজে ছবি: সোহেল সরওয়ার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চন্দ্রনাথ পাহাড় (চট্টগ্রাম) ঘুরে: আকাশের কান্নায় ভিজে পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের শরীর। কাদা খুব একটা না হলেও এবড়ো থেবড়ো লাল মাটিতে পা ফেলতে হচ্ছে মেপে মেপে।

গয়াকূণ্ড বাঁয়ে রেখে একটু এগুতেই পাহাড়ি ঝোপে ঘেরা সরু পথটা যেনো আরো পিচ্ছিল হয়ে উঠলো।

পাহাড় ফেটে গভীর এক খাদ তৈরি হয়েছে এখানে। ডানে ফুট চারেক উঁচুতে অর্ধচন্দ্রের রূপ নিয়ে যে সরু পথটা পাহাড়ের খাঁজে ঝুলে এগিয়ে গেছে, তাতে হয়তো অল্প আয়াসে সামনে এগুনো যেতো, কিন্তু ভিজে মাটিতে পা হড়কানোর ঝুঁকি প্রবল। অগত্যা ফাটলের ওপরে ঝুলে থাকা নড়বড়ে সরু সিঁড়িটা ধরতে হলো।

সোজা নাক বরাবর কিছুটা এগিয়ে বাঁয়ে সরেছে মাটির পিচ্ছিল পথটা। তারপর হঠাৎ বাঁয়ে ঘুরে ছোট এক ফ্লাটফর্ম।   কংক্রিটের প্লাটফর্মটির কিছু অংশ ভাঙা। বাকিটা নড়বড়ে। ওটা পেরুলেই ডানে উঠে গেছে সিঁড়ি। কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা নিচ থেকে দেখা যায় না।
Chandranath_7
প্লাটফর্ম লাগোয়া সিঁড়ির ডগাটা পুরোটাই ঝুলে আছে তলহীন খাদের ওপর। নিচে তাকালে মাথা ঘুরে উঠে। এখানে দাঁড়িয়ে আর লাঠির ওপর ভরসা করা যায় না। সরু সিঁড়িতেই হামাগুড়ি দিয়ে একটু একটু করে উপরে উঠতে হলো। এ যেনো পাহাড়ের কাছে এসে মাথা নুইয়ে উপরে ওঠা।

নিচে ওই ভয়ংকর খাদের ওপরে বিভিন্ন দিক থেকে বেরিয়ে আসা গাছের ডগায় দুলছে সাদা, লাল ফুল। এক পাশে জলপ্রপাতের মতো একটা ঝরনা। হেমন্ত কাল বলে ধ‍ারাটা ক্ষীণ। তবে পাহাড়ের নিচে জল আছড়ে পড়ার শব্দটা ঠিকই কানে আসে।  

এই সিঁড়ি ডিঙ্গিয়েই নেমে এলো নারীদের একটি দল। দলের অগ্রভাগের মেয়েটির নাম নীপা। তরতরিয়ে নেমে গেলো ঝুঁকিপূর্ণ সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে। এ যেনো নিজেদেরই বাসার সিঁড়ি। বাকিরা অনেক পেছনে তার নাম ধরেই ডাকছে।

তাদের পেছনে লাকড়ির বোঝা মাথায় উদোম শরীরের যে কাঠুরে নেমে এলো তার সাবলীল হাঁটা দেখে মনে হবে, বুঝিবা সমতল পথেই হাঁটছেন তিনি। কিন্তু আমাদের কাছে তো এ এক দূরতিক্রম্য পথ।
Chandranath_6
দীর্ঘ সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে সামনে পড়লো কয়েক হাত সমতল জায়গা। সামনে ফুট দশেক উঁচু থেকে গড়িয়ে পড়ছে ঝরণার কয়েকটি ধারা। অবিরত জলের ধারা অগভীর এক জলাধার তৈরি করেছে পাহাড়ের ঘাড়ে। দু’পাশ থেকে বাঁশের ডগা ঝুঁকে এসে যেনো কুর্নিশ করছে ঝরণাকে।

ঝরনার ভেতরে গাঁথা ধাতব পাইপ। মাথার ওপর দিয়ে পাহাড়ের গায়ে ঝুলে ক্রমশ নিচের দিকে নেমে গেছে। পাহাড় পাদদেশের বাজারে পানির সরবরাহ হয় এই ঝরণা থেকেই। পানির পাইপটাকে ঝরনার কলংক ছাড়া আর কিছু মনে হলো না।

ঝরণার এপাশে এক টং দোকান। পাহাড়েরই বাঁশ আর কাঠের বেঞ্চ। তবে সমতল থেকে আনা ডাব বিক্রি করছেন দোকানি। বিভিন্ন কোম্পানির কোল্ড ড্রিংকস উঠে এসেছে এই পাহাড়ের ওপরেও।
chandranath_9
তবে এ দোকানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পসরাটি হলো ছোট লম্বাটে বরই আকৃতির সুপ‍ারি। ভেতরটা খুবই নরম। পান ছাড়াই খাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এর নাম সীতার সুপারি। দোকানির দাবি, রামের স্ত্রী সীতা বনবাসকালে যখন এই পাহাড়ে আসেন তখন এই সুপারিই খেতেন তিনি। তাই এর নাম সীতার সুপারি।   

দোকানে বসে হাঁফাতে থাকা এক যুবক জানালেন, ছিনতাই হয়েছে পাহাড়ের ওপরে। ছুরিতে আহত হয়েছেন দু’জন। তার পরামর্শ, আজ আর উপরে না যাওয়াই ভালো। কিন্তু পাহাড় জয়ের নেশায় চাপা পড়ে গেলো অচেনা সেই যুবকের সতর্কবাণী।

ঝরনাটির ওপর দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে ডানে। বাঁয়ে কিছুটা নেমে ফের পাহাড়ের গায়ে পেঁচিয়ে উঠে গেছে সরু ট্রেইল। ওই ট্রেইল ধরলে হাঁটতে হবে বেশি। কিন্তু কষ্ট হবে কম। মাটির রাস্তা একটু উঠে ফের সমতলে এগিয়েছে। ফের উঠেছে একটু। চড়াই-উৎরাই ওতোটা খাড়া নয়।   তাই তীর্থযাত্রীরা এখ‍ান থেকে ওই পথ দিয়েই উঠেন। চন্দ্রনাথ মন্দির দর্শন শেষে নামেন ডানের সিঁড়ি পথে।
Chandranath_5
কিন্তু সকাল থেকে হওয়া ঝিরঝির বৃষ্টি ওই সরল রাস্তাটিকেই এখন করে তুলেছে মৃত্যুফাঁদ।   হা হড়কালেই হারিয়ে যেতে হবে গহীন খাদে। কনস্টেবল সাব্বির আহমেদের পরামর্শে তাই ডানের পথ ধরা।  

আর একটু এগুতেই সিঁড়ি আরো খাড়া হতে শুরু করলো। এদিকের সিঁড়িগুলো কোথাও কোথাও ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত খাড়া বলে মনে হলো।   অধিকাংশ স্থানে একেকটা সিঁড়ির উচ্চতা দু/আড়াই ফুট করে।   প্রতিটা সিঁড়ি ওঠার সময়ে তাই এতো উঁচুতে পা ফেলতে হচ্ছে যে, প্রতি ধাপেই মাথার কাছে চলে আসছে হাঁটু। যেনো বাড়ি খাচ্ছে মগজে।

কোথাও দু’পাশে গভীর খাদ। মাঝে সরু রাস্তা। কোথাওবা কেবল একপাশে খাদ। অপরপাশে পাহাড়ের খাড়া দেওয়াল। কোথাওবা জোড়া দেওয়ালের মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা।  
Chandranath_8
পাহাড়ি গাছগাছালি ছাড়াও পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মানুষ রোপিত বৃক্ষের দাপট। পাহাড়ের ঢালে হলুদ ক্ষেত, পেয়ারা বন। কোথাওবা গাবগাছের সারি। মাঝেমধ্যে খেজুর আর জাম্বুরার গাছ। বনের ভেতর তালগাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কোথাও কোথাও। ফাঁকে ফাঁকে আমলকি গাছ।

সত্তর/আশিটা সিঁড়ি পেরুনোর পর হয়তো কয়েক মিটার সমতল পথ। তারপর ফের শত সিঁড়ির খাঁড়া। খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠার কষ্টটা ক্রমে বাড়তেই লাগলো। হাঁফ ধরে বসে পড়ার উপক্রম। তারওপর অনেকক্ষণ ধরেই কাপড়ের সেলাই ছেঁড়ার শব্দটা মনের কোণে অস্বস্তির জন্ম দিচ্ছে। একটু পর কারণটা বুঝা গেলো।

খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওঠার জন্য প্রতিবার ধাপ ফেলার সময়ে একটু একটু করে ছিঁড়েছে প্যান্টের সেলাই। পুটের নিচ থেকে হাঁটু অবশি ছিঁড়ে গেছে। বড্ড বেকায়দা অবস্থা।

ভাগ্যিস গাছমা ছিলো গলায়। ঝরনায় গোসল করার অভিপ্রায়ে সঙ্গে নেওয়া গামছাটা যে লজ্জা বাঁচানোর মোক্ষম উপায় হয়ে উঠবে বুঝা যায়নি।
Chandranath_04
অগত্যা সিরাজগঞ্জ থেকে কেনা খাঁটি তাঁতের গামছাটা পেঁচিয়ে ফের উপরে উঠার মিশন। কয়েক ধাপ উঠে একটু বিশ্রাম। এরপর ফের কয়েক ধাপ উঠা।

শীতল আবহাওয়াতেও দরদর করে ঘাম ছুটছে শরীরে। বুক ফুলে উঠছে হাঁপরের মতো। পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা সিঁড়ি বেয়ে তবুও উপরেই উঠা। খাড়া সিঁড়ি পেঁচিয়ে উঠেছে কোথাও কোথাও।

এমন বিপজ্জনক রাস্তাতেও ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির ভালোবাসা। প্রায়শই দু’পাশে উঁকি দিচ্ছে শেফালি গাছের ডগা। সাদা সাদা শেফালি ফুল বিছিয়ে আছে ভয়ংকর সিঁড়ির অনেক স্থানেই। এ যেনো ভয়ংকর পথে বিছানো ফুলের গালিচা।

আর একটু উঠতেই পাওয়া গেলো ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া বেসরকারি চাকুরে আহসান আক্তারকে। আরো চার সঙ্গীসহ নেমে আসছেন তিনি। ডান হাতে তার ছুরির পোঁচ স্পষ্ট। জানালেন, অপর তিন সঙ্গী থেকে একটু আলাদা হয়ে চন্দ্রনাথ মন্দিরের পেছনে বিরুপাক্ষ মন্দিরের দিকে গিয়েছিলেন তারা দু’জন। তখনই হয় হামলাটা। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল নিয়ে চলে যায়।
Chandranath_3
সিঁড়িতে পাশ কাটিয়ে নেমে যান তারা। দেখা হতে থাকে এমন ছোটখাটো আরো ক’টি দলের সঙ্গে। চট্টগ্রামের মিতা চক্রবর্তীদের তিন জনের দল ছাড়াও দেখা হয় হাটহাজারি মাদ্রাসার ৮ জনের একটি দলের সঙ্গে। এই বিপজ্জনক স্থানেও ফূর্তিতে নেমে আসে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের তারেক আজিজ ও তার দল। ঘোড়াঘাট ছাড়াও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ক’জন আছেন এই দলে।  

এর পরই যেনো মানুষ শূন্য হয়ে গেলো চন্দ্রনাথ পাহাড়। দুপুরে ছিনতাইয়ের ওই ঘটনার পর থেকে কোনো দর্শনার্থী আর পাহাড়ে থাকার সাহস করছে না। যে যেখানে ছিলো নেমে গেছে। উপরে উঠছে কেবল বাংলানিউজ টিম। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মবিনুল ইসলাম আর চট্টগ্রাম ব্যুরোর সিনিয়র ফটোগ্রাফার সোহেল সরওয়ার মোটেই দমবার পাত্র নন।

আকাশ ছোঁয়া এক খাড়া সিঁড়ির মাথায় উঠতেই হাতের বাঁয়ে আর একট সিঁড়ির মাথায় চন্দ্রনাথ মন্দিরের চূড়াটা আবছাভাবে নজরে এলো। ওখানে ওঠার আগে একটু জিরিয়ে নেওয়ার লোভ সামলানো গেলো না।
Chandranath_2
গাছের নিচে বসে পাহাড়ি আমড়া আর কমলা বিক্রি করছেন এক দোকানি। আমড়াগুলো অধিকাংশই পেকে হলুদ বর্ণ নিয়েছে। তবুও টক। জংলি গন্ধটা নাকের ভেতরে ঢুকে যায়।

একপাশে এক পাশে কৈলাস ধাম ভক্ত সেবা আশ্রম। টিন ঘেরা স্থানে পাহাড়ের খাঁজ থেকে বেরিয়ে আসা বিশাল আকৃতির কালো পাথরের এক শিব লিঙ্গ। কিছুটা ভাঙ্গা। পূজা করছেন রামকৃষ্ণ ব্রহ্মচারী মহারাজ।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় চড়ার সিঁড়িগুলো অবশ্য ওতোটা খাড়া নয়। দুপাশের খাদও খাড়ার চেয়ে ঢালু বেশি। দুপাশের বুক সমান উঁচু জংলায় মাকড়সার জালে জমে রূপালী জল হাসছে যেনো।  
Chandranath_11
এখানে ওখানে গাছের ডালে মানত করে বাঁধা কাপড়, চিপসের ছেঁড়া প্যাকেট, পলিথিনের ছেঁড়া অংশ। চন্দ্রনাথের কাছে কে কি চেয়ে এসব বেঁধেছে কে জানে।
 
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়াটা অনেকটাই সমতল। মধ্যিখানে মন্দির। মন্দিরের মেঝের ঠিক মাঝখানে কষ্টি পাথরের এক শিবলিঙ্গ।

মন্দিরে ঢুকে সেই শিবলিঙ্গের সামনে বসামাত্র সটান দাঁড়িয়ে গেলেন পুরোহিত খোকন চন্দ্র ভট্টাচার্য। ‘ওঁম নমো:শিবা, ওঁম্ নমো:শিবা’ মন্ত্রে গমগম করে উঠলো মন্দিরের ভেতরটা।   খোকন ভট্টাচার্যের বয়স যে ৬২ তা তার শরীর দেখে ঠাহর করারই জো নেই। একহারা গড়নের মেদহীন শরীর। মুখে হাসিটা লেগেই আছে। বংশ পরম্পরায় এ মন্দিরে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু ঠিক কবে এই মন্দির প্রতিষ্ঠত তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারলেন না পুরোহিতও।

মিথ অনুযায়ী, নেপালের একজন রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে বিশ্বের পাঁচ কোনে পাঁচটি শিবমন্দির নির্মাণ করেন। এগুলোর অন্যতম হলো এই চন্দ্রনাথ মন্দ্রির। মহেশখালীর আদিনাথও তেমনই একটি মন্দির। বাকিগুলো হলো নেপালের পশুপতিনাথ, ভারতের কাশির বিশ্বনাথ, পাকিস্তানের ভূতনাথ। এগুলো সব আসলে দেবাধিদেব শিবের নাম। যখন যে বেশে থাকেন তখন সেই বেশ অনুযায়ী নাম হয় শিবের।
Chandranath
মন্দিরের চূড়ার আকৃতিটা মুঘল আমলের গম্বুজের মতো। চার কোনা ও দরোজার আর্চগুলোও তাই। মুঘল আমলে এ পাহাড়ের অনেক মন্দির সংস্কার করা হয় বলে বলা আছে সীতাকুণ্ড উপজেলা তথ্য বাতায়নে।

প্রতিবছর ফালগুন মাসে শিবরাত্রি বা শিব চতুর্দশীতে মেলা বসে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসে লাখো পূণ্যার্থী। বলা হয়ে থাকে, হিন্দুদের যতো দেবতা আছে সবারই আসন আছে এই পাহাড়ে। তবে বিভিন্ন নামে শিব মন্দিরের সংখ্যাই বেশি।

পুরো পাহাড়কে বেড় দিয়ে ভাঁজে ভাঁজে গড়ে ওঠা সব মন্দির আর আশ্রম দর্শন করতে চাইলে ক’দিন লাগবে কে জানে।

মন্দিরের ওপাশে পুলিশ ফাঁড়ি। জনা দশেক পুলিশ থাকেন সেখানে। টিম বদল হয় ২ মাস পর পর। এরই মধ্যে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক গাইড সাব্বির আহমেদ বিদায় নিয়ে ফাঁড়িতে ঢুকে গেছেন।
Chandranath_1
ফাঁড়ির পাশ দিয়ে এগিয়ে যেতেই প্রতিরোধ গড়লো দুটি কুকুর। পথজুড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার জুড়ে দিলো। এতো উঁচুতে কুকুর কি করে এলো কে জানে। আর একটু কাছে যেতেই পথ ছেড়ে সরে দাঁড়ালো কুকুর দুটি। অনেকটাই শান্ত। মাথা তুলে মন্দির থেকে বেরিয়ে আসা পুরোহিতকে দেখছে।

চন্দ্রনাথ মন্দিরের ওপাশে পাহাড়টা ফের নিচু হতে শুরু করেছে। আরো আধা কিলোমিটার গেলে বিরুপাক্ষ মন্দির। এটি শিবেরই আর একটি নাম। ওই বিরুপাক্ষ ও চন্দ্রনাথ মন্দিরে মাঝখানে পাহাড়র চূড়ার পথ থেকে পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার নিচে নামলে পাওয়া যাবে পাতাল পুরীর দেখা। সেখানে বিশ্বেশ্বর শিব, রুদ্রেশ্বর শিব, গোপেশ্বর শিব, পঞ্চানন শিব, গৌরী, পাতাল কালী, মন্দাকিনীসহ আরো অনেক দেবদেবীর বিগ্রহ রয়েছে। কিন্তু গহীন অরণ্য ‍আর খাড়া পথ হওয়ায় মানুষ সেখানে নামতে চায় না। এর এই বৃষ্টিভেজা পাহাড়ে তো সেখানে নামা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করাই শামিল।

এ পথেই কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আজ। পুরোহিত জানালেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পাহাড়ে দর্শনার্থী কমতে শুরু করে।

পুরোহিতের কথার সত্যতা আমরাই দেখেছি। অনেক দর্শনার্থী চন্দ্রনাথ পর্যন্ত না এসে মাঝ পথ থেকে ফিরে গেছেন।
Chandranath_10
এ মুহূর্তে চন্দ্রনাথ মন্দিরে দর্শনার্থী কেবল আমরাই তিন জন। এখান থেকে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল, চ্যানেলের ওপাশের দ্বীপ নজরে পড়ে বেশ। কিন্তু চন্দ্রনাথের চূড়া এখন মেঘের দখলে। খুব বেশি দূর দৃষ্টি চলে না। মন্দিরের চারপাশে পেঁজা পেঁজা মেঘ ঘুরছে। মনে হলো যেনো, পরম মমতায় আমাদের ঘিরে রেখেছে মেঘের দল, শরীরে এসে বুলিয়ে দিচ্ছে আদরের পরশ। মেঘের আদরে পাহাড় বেয়ে উঠার ক্লান্তি কোথায় মিলিয়ে গেলো!

ঘড়ির কাঁটা চারটা পেরিয়ে গেছে। একটু পরই সন্ধ্যা নামবে। পেরিয়ে আসা ভেজা পথেই নামতে হবে পাহাড় থেকে।

লাঠির ডগায় ভর করে ফের শুরু হলো পাহাড় বেয়ে নিচে নামা। আকাশ মেঘলা বলে অর্ধেক নামার আগেই সন্ধ্যা নামলো পাহাড়ে।

পর্বত-পাহাড়ে উঠার সময়ে যতো না দুর্ঘটনা ঘটে, তার চেয়ে বেশি ঘটে নামার সময়ে। সাবধানতার শেষ নেই তাই। এতো সাবধানতার কারণেই কি না কে জানে, শখ করে কেনা সীতার সুপারি দোকানেই ফেলে এলেন মবিন ভাই। (শেষ)

** বৃষ্টিভেজা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে-১: খাদের ওপর সরু সিঁড়িতে কলজে শুকিয়ে আসে
** ফিশারি ঘাটে মাছের মেলায়


বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৫
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।