মৌলভীবাজার: শুঁটকি এমন এক খাদ্যপণ্য যাকে কেউ কেউ খুব পছন্দ করেন। আবার কেউ কেউ একেবারেই পছন্দ করেন না।
কিছু কিছু বিশেষ শুঁটকি রয়েছে সাধারণ ক্রেতারা এর দাম শুনেই কেটে পড়েন! যেন মাত্রাতিরিক্ত দাম! সহ্য হওয়ার মতো নয় কিছুতেই। তাই চলে যাওয়াই শ্রেয়! এই বোধ থেকেই দ্বিধাচ্ছন্ন ক্রেতাদের ফিরে যাওয়া। কিন্তু বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে থাকেন মৌলভীবাজারের নৃ-জনগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।
তারা সর্বোচ্চ মূল্যের এ বিশেষ বাইম-শুঁটকি কিনতে এলে বিক্রেতাকে আগেভাগেই বলে দেন – ‘দেখিওবা ভালাগুলা দিবায়। দামের লাগি কোনো সমস্যা নায়। ’
‘বাইম শুঁটকি’ রান্নায় কড়াইয়ে তেল ছাড়ে – এটিই এই শুঁটকির বিশেষ দিক। মাছের শরীরের ভেতরে থাকা তেলগুলো রান্নার সময়ে অনায়াসে বের হয়ে আসে। মাছের তেলের এই বর্হিগমন স্বাদের গুণাগুণকে বাড়িয়ে দেয় বলে ক্রেতা জানান।
এমন সরল স্বীকারোক্তিতে অসৎ মানসিকতায় চতুর বিক্রেতা দাম এক লাফে ২-৪শ টাকা বাড়িয়ে দেয়। একটা একটা করে বেছে বেছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে আগের নির্ধারিত ১৮০০ টাকার বাইম-শুঁটকি গিয়ে দাঁড়ায় ২২০০ টাকা! তাতে কোনো সমস্যা নেই! বাইম-শুঁটকি নেওয়া চাই।
এত দাম দিয়ে নেওয়ার কারণটা কী? এই প্রশ্নে খাসি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সুমের জানান, এই শুঁটকি খুবই টেস্টি। ভালো করে রান্না করলে মাংসের মতো লাগে। শুঁটকি মাছে প্রোটিন বেশি থাকে। আমি সপ্তাহে একদিন শ্রীমঙ্গল এলেই আমার পরিবার শ্রীমঙ্গল থেকে এই শুঁটকি যতটা সম্ভব কিনে নিতে বলে।
‘আমি সরলভাবে এই মাছ নেবো শুনে শুঁটকি বিক্রেতা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কী আর করা!’ – বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার নতুন বাজারের শুঁটকি বিক্রেতা সামিক বাইম-শুঁটকি প্রসঙ্গে বলেন, এই বাইম-শুঁটকি চট্রগ্রাম থেকে আসে। সেদিন এক বস্তা এনেছিলাম। এখন এগুলো রয়েছে। এক বস্তায় প্রায় ১শ কেজি থাকে। আবার কোনো কোনোটাই ২শ কেজির মাছও থাকে। দাম পড়ে যায় প্রায় এক লাখ টাকার মতো। আমরা চট্রগ্রাম থেকে এনে স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্টন করি। তখন আমাদের পাইকারি দাম পড়ে কেজি প্রতি প্রায় ১৬০০ টাকা।
শুঁটকি মাছ বস্তায় আর সিঁদল মাছ মটকায় রাখতে। নয়তো, নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মটকায় থাকলে এক বছরেরও কিছু হবে না। বাইম-শুঁটকি ছাড়াও আমার এখানে কাইক্কা, টেংরা, ইচা, ননিয়া ছুরি, ধজ্জা, কাচকি, প্রভৃতি জাতের শুঁটকি রয়েছে। প্রায় আমার পুরো দোকানে ৮-১০ লাখ টাকার মালামাল রয়েছে।
বাইম-শুঁটকি খাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে সামিক বলেন, এই শুঁটকি খাওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো মাছের ঠোঁটের অংশ ফেলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে খেতে পারেন। তাছাড়া কষা করে রান্না করলে বাইম মাছের শরীর থেকে তেল বের হবে। এটাই এই শুঁটকির বিশেষ গুণ। তখন খেতে দারুণ স্বাদ লাগে।
বাঙালিরা এই মাছের দাম শুনে উঠে দৌড় দেন। কিন্তু খাসিয়ারা এই বাইম শুঁটকির মূল ক্রেতা। একটা একটা করে বেছে বেছে সবচেয়ে ভালো শুঁটকিগুলোই তাদেরকে দেই। তারাই আমার এই দামি শুঁটকির ব্যবসাটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে মৃদু ভঙ্গিতে তার ঠোঁট হাসে!
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
বিবিবি/এএটি