ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শিশু চা গাছগুলোর টার্গেট ‘৭০ বছর’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
শিশু চা গাছগুলোর টার্গেট ‘৭০ বছর’ নতুন আবাদকৃত শিশু চা গাছ। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: চা বাগানের একেকটি চা গাছ কতদিন বাঁচে? এই প্রশ্ন থেকেই যায় – সাধারণের কাছে। চা গাছ তো আর অমর বৃক্ষ নয়, যে আজীবন মাটি আঁকড়ে ধরে বেঁচে থেকে মানুষের মুখে তাৎক্ষণিক উদ্দীপ্ত হওয়ার পানীয়র জোগান দেবে।

 প্রকৃতির অনিবার্য এবং চিরসত্যর মতো তাকেও এদিন মরে যেতে হয়। তবে কিছুটা ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ মতোই। কিছুটা দুঃখবোধ থেকেই যায়- তার পাতা, ডালপালা আর ফুলেদের হাহাকারের মধ্যে। যা কেউ কখনো দেখে না। বুঝে না। প্রাপ্তবয়স্কের একটা সীমারেখা পেরোলেই প্রয়োজনে বয়স্ক চা গাছগুলোকে মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হয়! এভাবেই চলছে চা শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি শিল্পকাননে।  

‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’  বৈজ্ঞানিক নামের এই বৃক্ষের পাতা কোটি কোটি মানুষকে সকাল থেকে সন্ধ্যা, দুপুর থেকে বিকেল সারাক্ষণ চুমুকে চুমুকে তৃপ্ত করে চলেছে। চা এর চাহিদা তাই থেমে নেই। রেখাচিত্রে তা ক্রম ঊর্ধ্বমুখী।  অনায়াসে বলা যায়- মানুষেরই মতোই পুরো একটা জীবন তার! মানুষের আয়ু প্রায় ৭০ বৎসর। চা গাছেরও তাই। একেকটি শিশু চা গাছ ৭০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনশীলতার দীর্ঘ টার্গেট নিয়ে মাটিতে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে। মাটির বুকের ভেতর থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক হবার শারীরিক শক্তি সে অর্জন করে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে শ্রীমঙ্গলের একটি চা বাগানে প্রবেশ করে দেখা গেছে, নতুন আবাদ করা মাটিতে আসন গেড়েছে শিশু চা গাছগুলো। তাদের দলগত অবস্থান টিলাময় এই সৌন্দর্যে যোগ করছে অন্যমাত্রা। এই চা উপত্যকা ঘিরে যেন বৃক্ষময় চা শিশুদের প্রাণোচ্ছ্বাস! সেকশন (চা আবাদের সুনির্দিষ্ট এলাকা) ঘিরে এ যেন পুরাতন চা বৃক্ষ আর নতুন চা বৃক্ষের দারুণ এক মেলবন্ধন। চা বাগানের মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে গেলেই চোখে পড়ে ডানদিকে আর বামদিকে তাদের সম্মিলিত বয়সভিত্তিক উপস্থিতির চিহ্ন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, আবাদকৃত এই নতুন চা গাছগুলো বিটি-২ জাতের। বিটি-২ উচ্চ ফলনশীল জাতের (ক্লোন) চা গাছ। টেকশই এবং গুণগতমান সম্পন্ন চা উৎপাদনের লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপযুক্ত অভিযোজন কৌশল উন্নয়নের আওতায় এ প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।



এই নতুন ‘প্লেন্টেশন’ অর্থাৎ নতুন আবাদ প্রসঙ্গে নানান কথা হয় বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিটিএস) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র টি-প্লান্টার জি এম শিবলির সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চা গাছের সব পাতা চা উৎপাদনে কাজে লাগে না। কোয়ালিটি চায়ের জন্য শুধু ‘দুটি পাতা এবং একটি কুঁড়ি’ই উত্তোলন করা হয়। আর একেকটি চা গাছে এই দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবচেয়ে ভালো মান অক্ষুণ্ন থাকে প্রায় ৭০ বছর পর্যন্ত। তারপর চা গাছগুলো তুলে ফেলে সেখানে নতুন করে প্লেন্টেশন করা হয়।
 
তিনি আরও বলেন, এই নতুন আবাদকৃত জমিকে আমরা ‘ইয়াং-টি’ বলে থাকি। এই চারাগাছগুলো কলম থেকে উৎপন্ন করা। সেগুলোকে ইরিগেশনের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সেচ দেওয়া হচ্ছে যাতে ইয়াং-টিগুলো পানিশূন্যতার মধ্যে না পড়ে। গৃহপালিত পশুর আক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আবাদিভূমির চারদিকে বেড়া দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মাটির প্রয়োজনীয় সার, পুষ্টি জন্য নানা পদক্ষেপও নিতে হয়।

 রোপণের প্রায় ছয় মাসের পর থেকে এই ইয়াং-টির পাতাগুলো ম্যানুফ্যাকচারিঙে (চা প্রক্রিয়াজাতকরণ) যাবে বলে জানান জি এম শিবলি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।