ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘পার্বত্য সংস্কৃতি ধরে পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
‘পার্বত্য সংস্কৃতি ধরে পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে’ ফাইল ফটো

ঢাকা: পার্বত্য অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি ধরে রাখাসহ পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদারের আহ্বানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চারদিনব্যাপী পার্বত্য মেলা।  

পার্বত্য মেলার শেষ দিন রোববার (১৫ জানুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত চত্বরে ছিল বিপুল জনসমাগম।

বিকেলে মেলার মেলার সমাপনী আয়োজনে মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন সাংবিধানিকভাবে একজন বাঙালি যে অধিকার ভোগ করবে, সে অধিকার পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদেরও দিতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যারা পশ্চাৎপদ তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সংবিধানে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। এর পাশাপাশি অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীকে সমতাভিত্তিক জায়গায় আনার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ায় কথাও সংবিধানে বলা হয়েছে। সেভাবেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষরা এগিয়ে যাচ্ছেন, সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বিস্ময়কর সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ পরিবেশ যে অঞ্চলে বিরাজমান সেটা পার্বত্য অঞ্চল। এ কারণে বাংলাদেশকে বলা হয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পাহাড়ের মানুষ-সমতলের মানুষ, পাহাড়ের সংস্কৃতি-সমতলের সংস্কৃতি একাকার হয়ে আছে আমাদের এ বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভেতর। পার্বত্য অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। তাদের ভাষা, প্রচলিত প্রথাগত জীবনযাপন, তাদের জীবন বৈশিষ্ট্য এগুলোকে ধরে রাখা না গেলে অপূর্ব সৌন্দর্যের সমন্বিত এক বাংলাদেশ এক সময় থাকবে না। আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও জোরদার করতে হবে।

তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা, জীবনবোধ, চালচলন সবকিছু সংরক্ষণ করার জন্য যা যা করা দরকার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেটা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সংস্কৃতি অনেক বৈচিত্র্যময় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়নাভিরাম এবং একসময় সেখানে অনেক পর্যটক যেতো। এখন কমে গেছে। কিন্তু এই অঞ্চলের পর্যটিন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে এখন আর কোনো সহিংসতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন তা শান্তির জায়গা। আর শরীর ও মন ভালো করার জন্য পার্বত্য অঞ্চলের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন যেসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে, তারও একটা আলাদা মান আছে, বোধ আছে, অর্থ আছে। সব মিলিয়ে আমরা এ মেলার মধ্য দিয়ে আমাদের পার্বত্য সংস্কৃতি ও জীবনযাপনকে আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ১২ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় বসে ৪ দিনের পার্বত্য মেলা। এ আয়োজনে পাহাড়ের জীবন, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, রীতিনীতি ও ঐতিহ্য দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরা হয়।  

রোবাবর মেলার শেষ দিনে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। পাহাড়ি ফল, সবজি, পিঠা, কাপড়সহ নানা পণ্যের পসরা দেখা গেছে ঢাকার পার্বত্য মেলায়। মেলায় তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সামগ্রী, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা পণ্য, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার দ্রব্য প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে।

পার্বত্য এলাকা থেকে মেলায় আসা জ্যোতি চাকমা বলেন, আমি এ তৃতীয়বার মেলায় এসেছি। মেলায় হস্তশিল্পের পণ্য নিয়ে এসেছি। আমরা পার্বত্য এলাকার বাইরে গিয়েও পণ্য বিক্রি করতে পারায় খুশি।

মেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও বিপণনের মাধ্যমে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

২০১৫ সাল থেকে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ মেলার উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
এইচএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।