ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ!

ঢাকা: কুমিল্লায় মাসিক হারে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মো. হাসান ছালাম (৪১) নামে এক প্রতারক। পরে তিনি অর্থ দিয়ে রাজধানীর একটি শপিংমলে প্রথমে দোকান ভাড়া নেন।

পাশাপাশি শুরু করেন পাথরের ব্যবসা। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক দফায় কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আরও চারটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন।

এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পুঁজি করে ও জমি বন্ধক রেখে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আবারও ঋণ নেন তিনি। এরপর প্রথমে কয়েক মাস মাসিক কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে তা দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, চেক জালিয়াতির মাধ্যমেও বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সেগুলো পরিশোধ করেননি হাসান।

এসব অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হাসানের নামে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা না পেয়ে মামলা দায়ের করে। ২০২০ সালে আদালত হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর থেকেই তিনি রাজধানীতে গা ঢাকা দেন। পাশাপাশি দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করেন বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ২০২২ সালের একটি মামলায় হাসানকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাসানকে আটক করে র‌্যাব। হাসান কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানাপাড়া এলাকার মো. আব্দুস ছালামের ছেলে।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আটক আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বাকীর করেন, জেমস সুপার শপে পার্টনারশিপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নেন হাসান। পরে গিয়াস তার কাছে প্রতি মাসের লভ্যাংশের টাকা চাইলে টালবাহানা শুরু করেন তিনি। গিয়াস লভ্যাংশের টাকা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তার মূলধন ফেরত চাইলে হাসান গিয়াসকে তা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দেন ও তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে গিয়াস নিরুপায় হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২০২২ সালে হাসানকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের গ্রেফতারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব হাসানকে আটক করে।

প্রতারক হাসানের নামে ঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। হাসানের দুই ছেলে ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে বলেও জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন।

তিনি বলেন, হাসান যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জেমস সুপার শপ লিমিটেড, জেমস অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেড, গুলিস্থানে জামিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, মালিবাগ টুইন টাওয়ারে এশিয়ান স্কাই শপ, বারিধারায় জেমস গ্রুপ, জেমস অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেড, জেমস গ্যালারি লিমিটেড ও জেমস রিয়েল এস্টেট লিমিটেড।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসান দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকেন। যখন তিনি দেখতে পান, ভালো মুনাফা হচ্ছে তখন আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। এক সময় তিনি তার ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে উচ্চ হারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেন। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরে সে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। পাওনাদাররা টাকার জন্য নিয়মিত তাকে তাগিদা দিতে থাকলে হাসান টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চেক দেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা পাওয়ায় না এবং ব্যাংক কর্তৃক চেক ডিজঅনার করা হয়। এভাবে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা ফেরত চাইলে পাওনাদারদের হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখাতেন হাসান। এতে পাওনাদাররা তার নামে আদালতে চেক জালিয়াতির মামলাও দায়ের করেন।

তিনি বলেন, হাসান বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নেন। প্রথম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে মাসিক কিস্তি দিলেও পরে তা তিনি বন্ধ করে দেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। পরে এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার নামে আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপির দায়ে মামলা দায়ের করে। এসব বিষয় মীমাংসার জন্য আদালতের মাধ্যমে তাকে ডাকা হলেও হাসান কখনও হাজির হননি।

তিনি আরও বলেন, এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য তিনি তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে জমি কেনেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি পান্থপথের ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গা ঢাকা দেন। পলাতক থেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন প্রতারক হাসান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৩
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।