ঢাকা, রবিবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামী-স্ত্রী হত্যা, কিলিং মিশনে ছিলেন তিনজনের অধিক ব্যক্তি: ডিসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৪
স্বামী-স্ত্রী হত্যা, কিলিং মিশনে ছিলেন তিনজনের অধিক ব্যক্তি: ডিসি

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পশ্চিম মোমিনবাগে শফিকুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে (৫০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

পুলিশের ধারণা, চুরি-ডাকাতির উদ্দেশ্যে নয় তবে পূর্বের কোনো বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

পাশাপাশি এটাও ধারণা করা হচ্ছে, কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছেন তিনজনের অধিক ব্যক্তি।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, ১৭৫ পশ্চিম মোমিনবাগ বটতলা এলাকায় নিজের চার তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকতেন ওই দম্পতি। তাদের এক ছেলে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এসবিতে কর্মরত। অপর এক মেয়ে বিবাহিত, তিনিও ঘটনার সময় শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডটি আনুমানিক ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে ঘটেছে। পূর্ব পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ড। এছাড়া হত্যাকারীরা তিনজনের অধিক থাকতে পারে। তারা আগে থেকেই বাসার বাউন্ডারির ভেতরে ওত পেতে ছিল। হত্যাকারীরা দুইভাবে বাসায় প্রবেশ করতে পারে। এক প্রধান গেট টপকিয়ে পাশাপাশি ওই বাসার সঙ্গেই একটি নির্মাণাধীন ভবন আছে, সেটার একতলা ছাদ দিয়েও তারা বাসায় প্রবেশ করতে পারে।

প্রতিদিন শফিকুর রহমান ভোরের দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। নিয়মিতভাবে বাসার পানি ছাড়েন তারপরে পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। আজও একই সময় উঠেছিলেন তিনি। পরে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামেন পানি ছাড়ার জন্য। হয়তো বা নিচে নেমে পানি ছাড়ার পর বাসার বাউন্ডারির ভেতরে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে টেনে হেঁচড়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পরে দুর্বৃত্তরা চলে যায় দ্বিতীয় তলায়। তখন মশারির ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন তার স্ত্রী ফরিদা। মশারির ভেতরেই ঘুমন্ত অবস্থায় দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার হত্যা নিশ্চিত করে। স্ত্রী ফরিদার রুমের দরজাটা খুলেই নিচে নেমেছিলেন তার স্বামী।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আগে থেকেই হত্যাকারীরা ওই বাসায় ওত পেতে ছিল। কারণ শফিকুর যে প্রতিদিন ভোরে উঠে পানি ছাড়ে তারপরে মসজিদ যান তারা সেটা জানতো। দুর্বৃত্তরা ফরিদাকে হত্যার পর রুমের ভেতরে আলমারির লকার খুলে কিন্তু কোনো টাকা পয়সা নেয়নি। বিভিন্ন কাগজপত্র এলোমেলো করেছে তারা। এমনকি নিহত ফরিদার গলার স্বর্ণের চেইন ছিল সেটাও খোয়া যায়নি। এসব দেখে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে হয়তো দুর্বৃত্তরা কোনো কাগজপত্র বা এমনও হতে পারে দলিল খুঁজতে এসেছিল। ওই দম্পতির গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলায়।  সেখানে সম্পদ নিয়ে তাদের কোনো বিরোধ ছিল কিনা সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ঘটনার সময় দম্পতির ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঢাকায় আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাসার আশেপাশে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছে, সেটা এখনো অব্যাহত আছে। বাসার দুই পাশেই দুটি সড়কে সব সময় যানবাহন ও লোকজন চলাফেরা করে। সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে দুপুরের দিকে মরদেহ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।

নিহত দম্পতির ছেলে (সিটিএসবি) পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, ফেনীর দাগনভূঞার রামচন্দ্রপুর গ্রামে তাদের ১১ শতাংশ জমি নিয়ে দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গে ঝামেলা আছে। তবে কারা আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে, সেটা জানাতে পারেননি তিনি।

তিনি জানান, ঈদের পরের দিন ছুটি নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। ফেনীতে থাকা অবস্থায় বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকায় আসি। তার মা থাইরয়েড ও ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তার সার্জারিও করা হয়েছে। মা এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন। এভাবে বাবা-মাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এটা মেনে নিতে পারছি না।

তিনি আরও জানান, বাবা-মাকে যেভাবে হত্যা করেছে, সেই আঘাত দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা পূর্ব পরিকল্পিত ও ক্ষোভ থেকে তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেটা এখন তদন্তকারী পুলিশ বের করবে। নিহত শফিকুর জনতা ব্যাংকের হেড অফিসের গাড়িচালক ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে ছিলেন।

আরও পড়ুন>>

>>> যাত্রাবাড়ীতে মিলল পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবার মরদেহ

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৪
এজেডএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।