ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সোনাডাঙ্গীতে শতভাগ বিদ্যুৎ থাকলেও নেই গ্রামে ঢোকার রাস্তা! 

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২৪
সোনাডাঙ্গীতে শতভাগ বিদ্যুৎ থাকলেও নেই গ্রামে ঢোকার রাস্তা!  ক্ষেতের আইলের কাদা মাড়িয়ে ঘরে ফিরছে শিক্ষার্থীরা।

ফরিদপুর: সোনাডাঙ্গী নামে ছোট্ট একটি গ্রাম। সেখানে ৫০টির মতো পরিবার বসবাস করে।

তবে গ্রামটিতে ঢোকার কোনো রাস্তা নেই। তাই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির আইল দিয়ে হাটবাজার ও জেলা-উপজেলা শহরে আসা যাওয়া করে আসছেন বাসিন্দারা।  

বর্ষাকালে গ্রামটির চারপাশে পানি থৈ থৈ করে। তখন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারে না কেউ। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে স্কুল-মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া রাস্তা না থাকায় গ্রামের বাসিন্দাররা তাদের ছেলে-মেদের ভালো কোনো পরিবারে বিয়েও দিতে পারছেন না।

অসহায় এই গ্রামটির অবস্থান ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নে। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুর্ভোগের এসব তথ্য জানা গেছে।

গ্রামবাসীদের দাবি, গ্রামে প্রবেশের জন্য মাত্র ১০০ মিটার একটি রাস্তা নির্মাণ করে দিলেই তারা ভয়াবহ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাডাঙ্গী গ্রামের প্রবেশের জন্য কোনো রাস্তা নেই। বর্তমানে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় গ্রামের চারপাশ কাদামাটির স্তূপে পরিণত হয়েছে। বাসিন্দারা কৃষিপণ্য মাথায় করে ওই কাদামাটির ভেতর দিয়ে হেঁটে হাট-বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরাও কাদামাটি পার হয়ে স্কুল-মাদরাসায় যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

সোনাডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা ইমামুল হক ও সেলিমা বেগম বলেন, আমাদের ছোট্ট এই গ্রামে ৫০টি পরিবারে দুই শতাধিক সদস্য বসবাস করেন। গ্রামে শতভাগ বিদ্যুৎ আছে। তবে গ্রামের ঢোকার কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিদিন কাদামাটি পারি দিয়ে হাট-বাজার ও উপজেলায় যেতে হয়। এ ছাড়া গ্রামে ৫০ জনের মতো স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। তারাও অনেক কষ্ট করে স্কুল-মাদরাসায় যায়।

তারা আরও বলেন, এমন অবস্থায় বিশেষ করে গ্রামের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে বা কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারীর সমস্যা হলে দ্রুত যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো, সেই সুযোগ নেই। রাস্তা না থাকায় শুধু দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে না আমাদের, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়া নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কেউ আমাদের সঙ্গে আত্মীয় করতে চায় না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের গ্রামে ঢোকার একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

বল্লভদী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিদ বলেন, রাস্তা না থাকায় সোনাডাঙ্গী গ্রামের মানুষ একরকম গৃহবন্দি। তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে কয়েকবার রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি হালট না থাকায় সম্ভব হয়নি। জমির মালিকরাও জমি দিতে রাজি হচ্ছে না। বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, সোনাডাঙ্গী গ্রামের ঢোকার মতো সরকারি হালটও নেই। তাই রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওই এলাকার মানুষ যদি রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি দেন তাহলে রাস্তা নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।