ময়মনসিংহ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি এখন যে সরকার আছে, তারা জোর করে ক্ষমতায় আসেনি। দেশের ছাত্র-জনতা, শ্রমজীবী মানুষ, যুবক, সাধারণ মানুষ ও আমরা সবাই মিলে তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব দিয়েছি।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিজয় র্যালির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, শহীদ জিয়া ১৯ দফা নিয়ে যে পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন, তাকে তা করতে দেওয়া হয় নাই, তাকে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া জনগণের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হয়ে পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার পরে তার চেয়ে বেশি আর কারোও অবদান নাই। তাকেও অন্যায়ভাবে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যায়ভাবে জেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান সাহেবকে মিথ্যা মামলায় শাস্তি দেওয়া হয়েছিল এবং আরও অনেক মিথ্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছিল। তিনি আইনের পথে তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন। জুলাই ও আগস্টের যে আন্দোলন তা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের যে অবদান, তা সবাই স্বীকার করে। দিনরাত পরিশ্রম করে তিনি শুধু বিএনপিকে সংঘটিত করেন নাই, তিনি গোটা আন্দোলনকে সংঘটিত করেছেন।
এ সময় যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন এবং অতি সম্প্রতি জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের সবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনে কষ্ট হয়, কারণ মানুষ যে পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিল, সেই স্বপ্ন এখনো অর্জিত হয় নাই। এখনো দেশের লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে ঘুমায়, লাখ লাখ মানুষ আজ আশ্রয়হীন। এখনো আমাদের দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, মনে রাখতে হবে আমরা এক দফার আন্দোলন শুরু করেছিলাম, বিগত জুলাই আগস্টেও যে লড়াই হলো, তা শুধু ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য না, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে মনে পড়ে তাদের কথা, ১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা দেশের ভেতরে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর পর স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল হারিয়ে যায়। যাদের কাছে দেশের মানুষ গণতন্ত্র আশা করেছিল, তারা বাকশাল কায়েম করেছিল। সেই বাকশালের গোরস্থানের ওপর যিনি গণতন্ত্র রচনা করেছিলেন তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান। তার সময়ে দেশের বন্ধ কলকারখানা চালু হয়েছিল, রপ্তানি হয়েছিল চাল।
আগামী দিনে আমরা ফ্যাসিবাদের গোরস্থানে গণতন্ত্রের বাগান রচনা করতে চাই। এর নেতৃত্ব দেবেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান।
বিএনপি কখনো বেআইনিভাবে ক্ষমতায় আসেনি উল্লেখ করে জনগণের ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জিয়া শুধু ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন না, তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। তিনি সেই মানুষ যিনি বাংলাদেশের প্রথম ফোর্সেস কমান্ডার, জেড ফোর্স। আর বাকি যে দুটি ফোর্স কে ফোর্স এবং এস ফোর্স, এগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক পরে। তিনি একমাত্র সেনা নায়ক যিনি মুক্ত বাংলাদেশের একটা অংশে বেসামরিক প্রশাসন তৈরি করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসন যেখানে প্রশাসন ছিল, আদালত ছিল, পোস্ট অফিস ছিল, জেলখানা ছিল, শুল্ক আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। একটা স্বাধীন দেশে যা থাকে তার সবকিছু ছিল। তিনি সেই মানুষ যিনি ১৯৭১ সালে ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ বলে দেশের মানুষকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন। সেই একই মানুষ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমি মেজর জিয়া বলছি বলে এদেশের মানুষকে আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি জোর করে ক্ষমতা দখল করেন নাই, তাকে সিপাহী জনতা জোর করে ক্ষমতার আবর্তে নিক্ষেপ করেছিল। যেদিন তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেদিন বাংলাদেশে কোনো সংসদ ছিল না। কোনো মন্ত্রিপরিষদ ছিল না, একদিন বয়সী একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন মাত্র। সঙ্কটে জর্জরিত দেশে কেউ যখন দায়িত্ব নিতে সাহস পাচ্ছিল না, সেই দেশে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করে শুধু বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেননি, তিনি সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যম উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ কৃষি, তৈরি পোষাক শিল্প এবং বৈদেশিক কর্মস্থান শহীদ জিয়ার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছিল। ওই সময়ে তলাহীন বাংলাদেশ থেকে শহীদ জিয়ার আমলে জাপানকে পরাজিত করে জাতিসংঘের সাধারণ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। নতুন কলকারখানা স্থাপন, বন্ধ কলকারখানা চালু, সমুদ্রের মাছ শিকার, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, কুটির শিল্পের সম্প্রসারণ যাই বলেন সব কিছু হয়েছে শহীদ জিয়ার হাত ধরে।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত এই বিজয় র্যালিতে সংগঠনের আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুর সভাপতি এবং সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন- দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শহীদুল আলম খসরু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম খান রাজু, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবু সাঈদ, জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন পারভীন প্রমুখ।
এদিকে বিজয় র্যালি শেষে নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আয়োজনে বিজয় কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় গান পরিবেশন করেন স্থায়ী ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪
আরএ