নারায়ণগঞ্জ: পুরো নারায়ণগঞ্জ নগরীজুড়ে তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজ রয়েছে এমনটা মনে করেন নগরবাসী। এই লিকেজ থেকে নির্গত গ্যাসের কারণে অহরহ ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সর্বশেষ ফতুল্লার লালখাঁর মোড়ে মোক্তার মিয়ার পাঁচ তলা বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাটে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ২ জনের প্রাণহানি এবং ১৫ জনের মত আহত হন। আহতদের অনেকেই ঢাকা মেডিক্যালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেন বার বার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে, এতে অবহেলা কার এ প্রশ্ন বার বার সামনে আসলেও সমাধান হচ্ছেনা।
প্রতিটি ঘটনার পর একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন হয়। প্রতিটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয় এবং সেই প্রতিবেদনের পর আর নেওয়া হয় না কোনো জোরালো ব্যবস্থা। গ্যাস লিকেজ থেকে ঘটা দুর্ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে নগরীর গ্যাস লাইনে লিকেজের কাজ দ্রুত সমাধান করলে হয়তো আগামীতে অনেকটাই কমে আসবে এসব দুর্ঘটনার শঙ্কা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মূলত গ্যাসের লিকেজের কারণে সপ্তাহে বা মাসে একাধিক আগুন নেভাতে হয় আমাদের। গেল সপ্তাহে গলাচিপা এলাকায় গ্যাসের রাইজারে আগুন লেগেছিল। এ ধরনের ঘটনা আছেই। মাঝে মধ্যে পুরো শহর থেকেই ফোন পাই গ্যাসের গন্ধের। লাইনগুলো অনেক পুরাতন, এগুলো সেভাবে মেরামত করা হয়না। এছাড়া অসতর্কতাও রয়েছে।
তারা জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ার প্রেসিডেন্ট রোডের জিএম গার্ডেন ভবনে অবৈধ গ্যাস লাইন নিয়ে চালানো হতো। সেই অবৈধ গ্যাস লাইন ছাদের একটি রান্নাঘরে সংযোগ ছিল। সেই গ্যাস চালু করে দারোয়ান সিগারেট জ্বালাতে গেলে তাতে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এরকম গ্যাস ছেড়ে রাখায় অনেক স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আমাদের সতর্কতার অভাব রয়েছে।
নগরবাসীর মতে, ব্যক্তি অসতর্কতার পাশাপাশি পুরো শহরজুড়ে রয়েছে অবৈধ গ্যাস লাইন। এছাড়া পুরাতন এসব লাইনে লিকেজ আর লিকেজ রয়েছে। এত লিকেজ মেরামত করাও এখন দুস্কর। তবুও কোনো ঘটনা ঘটলে এসব লিকেজ মেরামত করা হয়। মাঝে মাঝে পুরো শহর গ্যাসের গন্ধে ভরে যায়। তখন দরজা জানালা খুলে ঘুমাতে হয় নগরবাসীকে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্টদের আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে এবং এই লিকেজ সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান তারা। নয়তো এই গ্যাস বোম্ব থেকে নারায়ণগঞ্জে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা আছে বলে মনে করেন নগরবাসী।
শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইশতাক হোসেন জানান, এইতো কিছুদিন আগেও গ্যাসের গন্ধে পুরো এলাকা ভরে ছিল। আমরা গ্যাস অফিসে জানতে চাইলে তারা জানায় গ্যাস লিকেজ মেরামতের জন্য এক ধরনের লিক্যুইড দেওয়া হয়েছে লাইনে যা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে। সেই গন্ধ দেখে লিকেজ মেরামতের কাজ করা হবে। এতে নাকি শঙ্কা নেই বলে জানান তারা। এমন হলে আমরা দরজা জানালা খুলে ঘুমাই।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আরেফীন জানান, অনেক পুরাতন লাইন হওয়ায় গ্যাসের লিকেজ আছে। আমরা গ্যাসের লিকেজ ও রাইজারের আগুন হর হামেশাই নেভাই। আমাদের অসতকর্তাও রয়েছে। অনেক স্থানে বেশিরভাগ শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। তারা চুলা বন্ধ করেন না। আবার অনেকে রান্নাঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখেন। গ্যাস নির্গত হতেও কিছুটা যায়গা দরকার। আমাদের যেমন সতর্ক হতে হবে তেমনি লাইনের লিকেজ মেরামত করাও জরুরি।
তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা জোনের ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম জানান, লিকেজ থেকে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে এই কথাটি সঠিক নয়। অভিযোগ পেলেই আমরা লিকেজ মেরামত করি। আসলে এখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই তিতাসের উপর দোষ চাপানো একটা নতুন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া রুমটি নাকি বন্ধ ছিল। তাহলে ভেতরে গ্যাস লাইন চালু ছিল এমনটি হতে পারে। ব্যক্তি অসতকর্তায় যদি কেউ চুলা ছেড়ে রাখে বা তাদের ঘরের লাইনে লিকেজ থাকে সেই দায় তিতাস নেবে না। আমাদের সার্ভিস লাইনে কোনো লিকেজ থাকলে আমরা দায় নেব। আর যদি কোনো লাইনে লিকেজ থাকে আমাদের জানাতে হবে। আমরা মেরামত করে দিবো।
তিনি আরও জানান, আমরা মাইকিং করছি, সতর্ক করছি এবং তল্লার মত ঘটা দুর্ঘটনা রোধে করণীয় নিয়ে আমাদের নিয়মিত প্রচার করি। মানুষ তবুও সচেতন নয়। আমাদের লাইনগুলো নিয়মিত চেক করি এবং লিকেজ সারাতে আমাদের জরুরি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করে।
আরও পড়ুন >>>
রান্নার গ্যাস থেকে বাড়িতে বিস্ফোরণ, নিহত ১ আহত ১৫
ফতুল্লায় গ্যাস বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২১
কেএআর