ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর চিরায়ত কৃষ্টি ‘ফাগুয়া’ উৎসব

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর চিরায়ত কৃষ্টি ‘ফাগুয়া’ উৎসব শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত ফাগুয়া উৎসবের নৃত্যমুর্ছনা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: নানান রঙের বর্ণচ্ছটা। লাল, হলুদ, সাদা প্রভৃতি রঙ ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীদের প্রতীকী রঙ হয়ে মঞ্চ ঝলমল করেছিল।

গানের ছন্দে নেচে নেচে চা বাগানের ক্ষুদে শিল্পীরা জানান দিচ্ছিল তাদের আত্মসংস্কৃতিধারা।

নানান বয়সের শতসহস্র নারীপুরুষ আবির নিয়ে রঙের খেলায় মেতে উঠলে সবুজ চায়ের বাগানের হৃদয় কিছুক্ষণের জন্য যেন নানান রঙে বর্ণিল হয়ে ওঠে।

রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানে ‘ফাগুয়া উৎসব-১৪২৮’ আয়োজন করে ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদ। চা জনগোষ্ঠী থেকে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্বে ওঠে আসা ব্যক্তিদের সম্মিলনে শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে আয়োজন করা হয় এই ফাগুয়া উৎসবের।

উৎসবে কেবল রঙের হোলি খেলাই নয়, ছিল ভিন্ন ভিন্ন ২০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনাগুলো। পত্রসওরা, নৃত্যযোগি, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাড়িনৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলানৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত, ভৃমিজদের ঝুমুর নৃত্য, মুন্ড়াদের লাঠি নৃত্য, সাঁওতালদের ডং ও নাগড়ে, মাহাতো কুর্মীদের লাটি ও ঝুমুর নৃত্য একসঙ্গে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা শ্রমিকরা তেমন অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আসা দর্শকরাও।

চা শ্রমিক সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় চল্লিশটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের মধ্যে বৃহত্তর অংশ চা-জনগোষ্ঠী। তাদের রয়েছে পৃথক পৃথক ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। এ ফাগুয়া উৎসবে ছিল এই কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পুনর্বিন্যাসের গতিধারা।

ফাগুয়া উৎসবটি উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিভাগের উপ-পরিচালক মল্লিকা দে।

বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গলের উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নজরুল ইসলাম, প্রথিতযশা সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কীম প্রমুখ। সাংস্কৃতিক এই অনুষ্ঠানে দ্বৈত-উপস্থাপক ছিলেন চা শ্রমিক সন্তান প্রকাশ ভর ও মিনা রবিদাশ।

দেউন্ডি চা বাগানের থেকে আসা প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, শত দুঃখ-কষ্ট, শত অভাব-অনটনের মধ্যেও উৎসবের কয়েকটি দিন তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করেন। শ্রমিকেরা এই আনন্দ ভাগাভাগি করে থাকেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। দূর-দূরান্তের চা-বাগান থেকে মেয়েরা নাইওর আসে জামাইসহ। আমাদের সংস্কৃতির এই উৎসবটি করতে পেরে নিজেকে সার্থক মনে হচ্ছে।

দ্বিতীয় বারের মতো এই আয়োজন হলেও আয়োজনটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিকদের এটি একটি বিশেষ আয়োজন। পরবর্তী বছর আরো বড় আয়োজনে ফাগুয়া উৎসব করা হবে বলে জানান কমিটির সদস্য সচিব এবং কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা।

‘ফাগুয়া উৎসব-১৪২৮’ কমিটির আহ্বায়ক এবং রাজঘাট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান বিজয় বোনার্জী জানান, দিনে দিনে চা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চা জনগোষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিগুলো ধরে রাখার জন্যই এই উৎসবের আয়োজন করছি। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চা বাগান থেকে চা জনগোষ্ঠী এই উৎসবে এসে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
বিবিবি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।