ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নয় মাস সাপ-ব্যাঙের সঙ্গে থাকতে চায় না সাতক্ষীরার মানুষ  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
নয় মাস সাপ-ব্যাঙের সঙ্গে থাকতে চায় না সাতক্ষীরার মানুষ   নাগরিক সংলাপ

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা দূরীকরণে করণীয় বিষয়ক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
 
সোমবার (২৮) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতী, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম।

সংলাপে ‘আসছে বর্ষা ও জলাবদ্ধতা: নিষ্কাশনের পূর্ব প্রস্তুতি জরুরি’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রবীণ সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন বারসিকের সহকারী কর্মসূচি কর্মকর্তা গাজী মাহিদা মিজান।

নাগরিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে বক্তব্য দেন নাগরিক নেতা ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, বাসদ নেতা অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, বাংলাদেশ জাসদের নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার জাহিদ তপন, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, উন্নয়ন কর্মী জি এম মনিরুজ্জামান ও অ্যাড. মুনীরউদ্দীন, সাংবাদিক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী, জলবায়ু কর্মী এস এম শাহিন আলম, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দা আশুরা বেগম, রাজার বাগান এলাকার অণিমা দাসী, বদ্দিপুর কলোনির জাহানারা বেগম, আশরাফ আলী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বছরের নয় মাস সাপ-ব্যাঙের সঙ্গে পানিতে থাকবো আর তিন মাস শুকনায় ভালো থাকবো এমনভাবে আমাদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই যন্ত্রণা থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই। আমরা জলাবদ্ধতামুক্ত জনপদ চাই।

জনভোগান্তির এই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা আরও বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই চিংড়ি চাষ এলাকাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে যথাযথ নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি সরানো না গেলে সাতক্ষীরার মানুষ আবারও জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে।

নাগরিক সংলাপে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতী ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু প্রায় একই সুরে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা নয়-ছয় করা হচ্ছে। খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঠিকাদার নিয়োগ নয় বরং নিজেরাই পরোক্ষভাবে ঠিকাদারিত্ব করে পানি সরানোর নামে এসব খননকাজ থেকে লুটে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ সালে বেতনা খননের নামে যে লুটপাট চালানো হয়েছিল ঠিক একই ধারাবাহিকতা এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খননের নামে বাস্তবতা বর্জিত প্রকল্প দিয়ে টাকা আত্মসাৎ এবং মরিচ্চাপ খননের নামেও একই কায়দায় সরকারি টাকা লুটপাটের মহোৎসব চলছে। আর এসব ব্যাপারে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কোনো বক্তব্য পানি উন্নয়ন বোর্ড গ্রহণ করছে না। এমনকি এসব কাজের ভেতর ও বাহির সম্পর্কেও জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করতে বাহানা করছেন।

সংলাপে অংশ নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে ভদ্রলৌকিক সংলাপ করে লাভ হবে না বরং প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্টদের ঘেরাও করে জবাবদিহিতা আদায় করতে হবে। সরকার সাতক্ষীরার দুটি নদী বেতনা ও মরিচ্চাপ এবং সংশ্লিষ্ট ৮২টি খাল খননের মহাপরিকল্পনা নিয়ে ৪৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ এই টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারছে না।

তারা আরও বলেন, সরকারের বরাদ্দ দেওয়া টাকা পাউবো কর্মকর্তারা নিজেদের আড়াল করে ঠিকাদারদের নামে কিনে নেয়। সেই কাজে নিয়োগ করা হয় সাব ঠিকাদার। আর সাব ঠিকাদাররা শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করে সামান্য কিছু কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের ইতি টেনে থাকেন। এভাবেই সরকারি টাকা কর্মকর্তারা পকেটে তুলে নেয়। আর মানুষ বারবারই জলাবদ্ধতায় ডুবতে থাকে। অনতিবিলম্বে প্রাণসায়ের খাল যথানিয়মে খনন করে বেতনার তিন চারটি অকেজো স্লুইস গেট গুঁড়িয়ে দিয়ে এবং চিংড়ি চাষের নামে দেওয়া ছোটবড় বাঁধ ভেঙে চুরে ও সাতক্ষীরা পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সচল করে জনগণকে জলাবদ্ধতামুক্ত করা যাবে বলে নাগরিক কমিটির সদস্যরা জোরালো মন্তব্য করেন।

আর এই দাবি আদায়ে মাঠে নামার কথা উল্লেখ করে সাতক্ষীরা পৌরসভা, সদর উপজেলা পরিষদ, সব ইউপি চেয়ারম্যান, সব জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজকে এক প্ল্যাটফর্মে এসে কাজ করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।