ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশেই বরখাস্তের আদেশ?

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২২
রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশেই বরখাস্তের আদেশ? বাঁ থেকে ইমরুল কায়েস প্রান্ত, টিটিই শফিকুল ইসলাম ও রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

পাবনা (ঈশ্বরদী): রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকারী যাত্রীদের জরিমানা করায় সংশ্লিষ্ট টিকেট পরীক্ষককে (টিটিই) বরখাস্তের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় জড়িতরা নিজের ‘আত্মীয় নয়’ বলে জানালেও রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশে টিটিইর বরখাস্তের আদেশ হয়েছে বলে দাবি করেছে ওই যাত্রীদের পরিবার।

রোববার (০৮ মে) পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ডিসিও কার্যালয়ে বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলামকে তলব করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (০৭ মে) বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ওঠা তিন যাত্রীদের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দেওয়া ইমরুল কায়েস প্রান্ত’র মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা নিজেকে মন্ত্রীপত্নী শাম্মী আক্তার মণির মামাতো বোন দাবি করেন।

গত ০৪ মে দিনগত রাতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ৭২৫ নম্বর সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ওঠেন প্রান্ত, ওমর ও হাসান নামের তিন যাত্রী। এ সময় কর্তব্যরত টিটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে বসা ওই যাত্রীদের টিকেট দেখতে চাইলে তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন।

এরপর পাকশী বিভাগীয় রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে টিটিই শফিকুল তাদের জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকেট করে দেন। এতে যাত্রীরা তাৎক্ষণিক কোনো অভিযোগ না করলেও পরে পাকশী বিভাগীয় রেলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শুক্রবার (০৬ মে) টিটিই শফিকুলকে বরখাস্তের আদেশ দেন।

এ বিষয়ে টিটিই শফিকুল ইসলাম বাংলাননিউজকে বলেন, আমি কারো সাথে অশোভন আচরণ করিনি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি। আমাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে, আমি ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। সেদিন যা ঘটেছে, আমি সেটাই বলবো। এরপর স্যারেরা যে ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।

পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, টিটিই শফিকুল আমাকে ফোন করে বলেন,মন্ত্রী স্যারের তিনজন আত্মীয় যাবেন। তাদের টিকেট করে দিতে হবে। আমার সাথে এটুকুই কথা হয়েছে।

তবে মন্ত্রীপত্নী শাম্মী আক্তার মণিকে ছেলের সঙ্গে টিটিই শফিকুলের বাগবিতণ্ডার ঘটনাটি জানানোর পরই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করেছেন ইয়াসমিন আক্তার নিপা।

তিনি বলেন, শাম্মী আক্তার মণি আমি আপন মামাতো বোন। কেউ না হলে তিনি আমার বাড়িতে ঈদ করতেন না। ঈদের আগে শনিবার তিনি আমার বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় চলে যান। আমি রান্না-বান্না করে দিয়েছি, রাতে পৌঁছে সেগুলোই গরম করে খেয়েছেন তারা।

সেদিনের তিন যাত্রীর পরিচয়:

লিখিত অভিযোগ দেওয়া যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তর বাবা মুজাহিদুল ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলায়। তবে প্রান্তর বাবা কর্মসূত্রে আবুধাবিতে বসবাস করায় তারা নানার বাড়ি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার নূর মহল্লায় থাকেন।

এছাড়া অপর দুই যাত্রী হাসান এবং ওমর ইয়াসমিন আক্তার নিপার মামাতো ভাই। এর মধ্যে হাসান একই মহল্লার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। তিনি রাজশাহীর একটি কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়েন। আর ওমর একই মহল্লার আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি পাবনার একটি বেসরকারি প্যারামেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়েন।

শনিবার ঈশ্বরদীর নূরমহল্লা এলাকায় গেলে ট্রেনযাত্রী হাসানের ভাই হোসেন বলেন, রেলমন্ত্রীর স্ত্রী টিটিই শফিকুলকে ফোন করে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে তিন আত্মীয়ের ঢাকায় যাওয়ার বিষয়ে জানান। এ সময় তাদের টিকেট কেটে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

এ বিষয়ে টিটিই শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রী স্যারের স্ত্রী আমাকে ফোন করছিলেন। তিনি টিকেট কেটেই ওই যাত্রীদের ট্রেনে পাঠানোর কথা বলেন। তবে ওই তিন যাত্রী দাবি করেছেন, তারা কাউন্টারে এবং অনলাইনে টিকেট পাননি।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ কিংবা টিকেট করানোর জন্য টিটিই শফিকুলকে বরখাস্ত করা হয়নি। যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় বরখাস্ত করা হয়েছে। আমাদের কন্ট্রোল অফিস থেকে এ বিষয়ে একটি অর্ডার আসে।  

এছাড়াও এ ঘটনায় শুক্রবার (০৬ মে) রাতে পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলাম বাবুকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।

তবে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে ঈশ্বরদী রেলওয়ের শ্রমিক ও কর্মচারীরা।

তারা বলেন, কারো বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ এলো, অভিযোগকারী মিথ্যাও বলতে পারে। বিভাগীয় তদন্ত না করে, খোঁজ না নিয়েই টিটিই শফিকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এটা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে বলে আমাদের বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।