ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শব্দ-বায়ু দূষণ বেশি শাহবাগ-গুলশানে, স্বস্তিতে সংসদ ভবন এলাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
শব্দ-বায়ু দূষণ বেশি শাহবাগ-গুলশানে, স্বস্তিতে সংসদ ভবন এলাকা ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বায়ু মানের দিক দিয়ে ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয় শাহবাগে এবং সবচেয়ে কম বায়ুদূষণ জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়।

এদিকে মানমাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হওয়া উচ্চ শব্দের ঢাকায় সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয় গুলশান-২ চত্বরে। আর সবচেয়ে কম শব্দদূষণ হয় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়।

এসব তথ্য উঠে এসেছে বায়ু ও শব্দ মানের পরিস্থিতি নিয়ে করা এক জরিপ প্রতিবেদনে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রোববার (২৯ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম। এ কনসোর্টিয়াম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থায়নে এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ কেন্দ্রের (ক্যাপস) একটি জোট; যারা দূষণবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

ক্যাপস ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ঢাকা শহরের ১০টি স্থানে বায়ু শব্দের মান কত তা পর্যবেক্ষণ করে। জরিপের জন্য তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় আহসান মঞ্জিল, আগারগাঁও, আব্দুল্লাহপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি-৩২, জাতীয় সংসদ এলাকা, তেজগাঁও, মিরপুর-১০ ও গুলশান-২ এলাকা থেকে। এ ১০ স্থানের প্রত্যেকটিতে দিনে-রাতে ৪ ঘণ্টা করে বায়ু ও শব্দ মাপার যন্ত্র দিয়ে ৫২০টি নমুনা নেওয়া হয়।

উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফল প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরের দশটি স্থানের বায়ুর মানের অবস্থা সূচক অনুযায়ী অস্বাস্থ্যকর। ঢাকার বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ চলমান নির্মাণ প্রকল্প। এগুলোতে বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা দিলেও তা মানতে দেখা যায় না।

এছাড়া, বাতাসে পিএম ২.৫ বস্তুকণার গড় বার্ষিক উপস্থিতি প্রতি ঘন মিটারে ৭৭ মাইক্রোগ্রাম, যা আদর্শমানের (১৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। বাতাসে পিএম ১০ বস্তুকণাে উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ১০৫ মাইক্রোগ্রাম যা আদর্শ মানের চেয়ে দুইগুণ বেশি। শাহবাগ এলাকায় অতি সূক্ষ্ণ বস্তুকণা পিএম-২.৫–এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৮৫ মাইক্রোগ্রাম। আর সর্বনিম্ন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় তা ৭০ মাইক্রোগ্রাম।

ঋতুভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ বস্তুকণা উভয় ক্ষেত্রেই শীতকালে দূষণের আধিক্য বেশি। পিএম ২.৫ এর পরিমাণ গড়ে ১২৭ মাইক্রোগ্রাম (৮ দশমিক ৪ গুণ বেশি) এবং বস্তুকণা ১০ এর পরিমাণ গড়ে ৬২ মাইক্রোগ্রাম।

ঢাকার ১০টি জায়গার মধ্যে গুলশান-২ এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মান পাওয়া গেছে। সেখানে শব্দের মান ছিল ৯৫ দশমিক ৪০ ডেসিবেল, যা আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবেল) থেকে ১ দশমিক ৭ গুণ বেশি। গুলশান ২ এলাকায় ১৩২ ডেসিবেল পর্যন্ত উচ্চশব্দ অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া তেজগাঁও এলাকায় ৮৯ ডেসিবেল, আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ৯৫ ডেসিবেল এবং জাতীয় সংসদ এলাকায় ৩১ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠিতা পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, শহরে আব্দুল্লাহপুর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত অনেকগুলো নির্মাণ প্রকল্প চলছে। এখানে বাতাসের অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২.৫ এর অস্তিত্ব অনেক বেশি। ঢাকাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সবার। নীরব ঘাতক বায়ু ও শব্দ দূষণ কেড়ে নিচ্ছে হাজারো প্রাণ। অসুস্থ করছে সন্তানদের, চিকিৎসা ব্যয় আর এদিকে প্রকৃতির নিজস্ব ভারসাম্য হারাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, নির্মল বায়ু আইন ২০১৯ এর খসড়া চূড়ান্ত করা, পরিবেশ বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া, ২০০৬ সালের শব্দদূষণ নীতিমালা অনুযায়ী জনসাধারণকে সচেতন করা এবং শব্দ দূষণ রোধের নিয়মিত মনিটর করাসহ বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

আয়োজনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, আগে নির্মাণ কাজের জন্য ঢাকায় এত বায়ুদূষণ ছিল না। এখন তা বেশি। নির্মাণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে সরকার একটি আইনের করেছে কিন্তু সেই খসড়াটি এখন আইন আকারে প্রকাশিত হয়নি বরং এটি খসড়া আকারে প্রকাশ করতে যাচ্ছে সরকার, যা খণ্ডিত এবং সমন্বিত নয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, একটা দেশের উন্নয়ন যদি করতে হয়, অর্থনৈতিক কাঠামো যদি এগিয়ে নিতে হয় তাহলে দেশের পরিবেশ ও শব্দ দূষণ একটা মাত্রায় বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এসব এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ সমস্যাগুলোকে বৈজ্ঞানিক উপাত্তের ভিত্তিতে বলতে হবে। জনসাধারণের সামনে এটিকে সহজভাবে তুলে ধরতে হবে এবং সচেতন করতে হবে।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, পরিবেশের আন্দোলন আসলে একটা রাজনৈতিক আন্দোলন। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তারা উন্নয়ন করার চেষ্টা করবে। কারণ, এই উন্নয়ন চোখে দেখা যায়। আবার বিরোধী দল এই উন্নয়নের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো নিয়ে সতর্ক থাকবে। এর মাঝে একটা বিশ্বাসযোগ্য দল থাকা দরকার, যারা উন্নয়নের পক্ষে থাকবে এবং উন্নয়নের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো কমানো নিয়ে কথা বলবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মইনুদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক কাজী সারোয়ার ইমতিয়াজ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
এইচএমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।