ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চট্টগ্রামের ডিসি কি প্রতিহিংসার শিকার?  

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
চট্টগ্রামের ডিসি কি প্রতিহিংসার শিকার?  

‘হি ইজ এ গুড ডিসি, অনেস্ট, হার্ড ওয়ার্কিং, গ্রেট অফিসার। চট্টগ্রামের জঙ্গল সেলিমপুরের শত শত কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার করেছেন তিনি।

এটা আগের কোনো ডিসি সাহস করেনি। সে ক্লিন ইমেজের। হি ইজ এ ট্রান্সপারেন্ট অফিসার। যুগ যুগ ধরে দখলে থাকা এসব সম্পত্তি উদ্ধার করার কারণেই তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র প্রভাবশালীদের। ’ 

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের বিষয়ে কথাগুলো বলছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন বলেন, ডিসি সাহেব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। তিনি চট্টগ্রামের দিনমজুর, কৃষক - শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার দোঁরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন। দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালদেরকে গ্রেফতার করেছেন। হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করেছেন। এ কারণেই ঈর্ষান্বিত হয়েই তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে। আমরা এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আগামী শনিবার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেব।

জেলা প্রশাসকের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মোহাম্মদ মমিনুর রহমান প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার দখলকৃত জমি উদ্ধার করেছেন। বিভিন্ন দফতরে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১৭টি মামলা দিয়ে পুরো সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছেন। অনিয়মবিরোধী এসব কর্মকান্ডের কারণে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র ক্রমাগতভাবে তার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। সুযোগ বুঝে মোনাজাত ইস্যুকে সামনে এনে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিশোধ নিতে চায়। স্থানীয়দের ভাষ্য, এমন সৎ অফিসার খুবই প্রয়োজন। যিনি যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

এ বিষয়ে এনজিও কর্মী ও সংগঠক জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, তাঁর মতো অফিসার চট্টগ্রামবাসী এর আগে পায়নি। তিনি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ প্রভাবশালীরা বরাবরই মানুষের অধিকার হরণ করেছে। তিনি (ডিসি) আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার ক্ষতি হওয়া মানে গোটা চট্টগ্রামবাসীর ক্ষতি। আমরা তার জন্য প্রয়োজনে আন্দোলনে যাব। বিশেষ একটি মহল ডিসিকে হেনস্থা করার ষড়যন্ত্র করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ঠুনকো। এটি যে গভীর ষড়যন্ত্র তা তদন্ত করে প্রকৃত সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।  

এদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ডিসি হিসেবে মোহাম্মদ মমিনুর রহমান যোগদানের পর এ পর্যন্ত ১৩৬টি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন। কোনো কোনো অভিযান ছদ্মবেশেও করেছেন তিনি। ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ ১৮৩ জনকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন। বিপ্লবি যতিন্দ্র মোহন সেনের দখল হয়ে যাওয়া বাড়ি তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দখলমুক্ত করেছেন। যার বর্তমান মূল্য ১২৭ কোটি টাকা। কালুর ঘাট সেতুর কাছে ১০৬ একর জায়গা উদ্ধার করেছেন তিনি। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এই জায়গায় একটি জাদুঘর হচ্ছে। পটিয়ায় ৮০০ একর জায়গা উদ্ধার করেছেন তিনি।

স্থানীয়রা বলছে, ডিসি মমিনুর সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার ১০০ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এজন্য স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তার বিরুদ্ধে ফান্ড ক্রিয়েট করে উঠে পড়ে লেগেছে। এজন্য তাকে বিভিন সময় হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ সব অনিয়ম বিরোধী কর্মকান্ডের কারণে একটি চক্র ক্রমাগতভাবে তার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারই বহি:প্রকাশ আজকের ঘটনা।

এ বিষয়ে কথা হয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি। এসব বড় উদ্যোগ নিতে কখনো ভয় পাইনি। আমাকে কিছুদিন আগেও থ্রেট করা হয়েছে, আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখা হবে। আমি বলেছি, ডিসি হিসেবে কোনো অপরাধ করিনি। আপনারা অপরাধ খুঁজে পেলে লিখতে পারেন। আমি এ পর্যন্ত দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে সরকারি দখলে রেখেছি। এ কারণে চক্রান্তকারীদের চক্ষুশুল হয়েছি। জঙ্গল সলিমপুরের ঘটনার মামলায় ইয়াসিন আলী নামের এক প্রভাবশালীকে আমরা গ্রেফতার করেছি। সে এতটা ভয়ঙ্কর যে, আমার আশঙ্কা সে ছাড়া পেলে আমাকে ফিজিক্যালি এটাক (শারীরিক ভাবে আক্রমণ) করবে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে এক মোনাজাতে অংশ নেওয়ার অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার পদ থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে সরিয়ে নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে মোনাজাত করা ও ভোট চাওয়ার অভিযোগ ওঠায় এই সিদ্ধান্ত নেয় সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।