ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৮ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার’ অভিযোগ ববি শিক্ষার্থীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার’ অভিযোগ ববি শিক্ষার্থীদের

বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে ‘মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার’ অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় তার সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, দীর্ঘক্ষণ নেটওয়ার্ক কভারেজ বন্ধ থাকার কারণে প্রকৃত ঘটনা কি ঘটনা ঘটেছে জানাতে পারিনি। তাই তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল। এর আগেও দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে চলছে। দীর্ঘ আন্দোলনের সময় জনগণের ও সরকারের ৫ টাকারও ক্ষতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা করেনি। তবুও ন্যাক্কারজনকভাবে র‌্যাব-পুলিশ-এপিবিএন ও বিজিবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক দখল করে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করছি। আমরা রাস্তায় যাওয়ার চেষ্টা করি। কোনো রকম উস্কানি ছাড়া রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। প্রকৃত সংখ্যা বলতে পারছি না, তবে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তালিকা রয়েছে। পুলিশের গুলিতে একজন শিক্ষার্থীর চোখ নষ্ট হয়েছে। তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর বাইরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬ জনের অবস্থাও গুরুতর। হামলার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখার সুযোগ নেই। কোনো অপশক্তি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা শিক্ষার্থীদের দখলে রয়েছে।

সুজয় শুভ দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া পুলিশের ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ নেই। পুলিশ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গুলি চালিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আমাদের মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দায়ভার এড়াতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা পই পই করে এ হিসেব বুঝে নেবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হিসেব দিতে হবে। আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসা পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বন্ধ ছিল। অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। রাষ্ট্র মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লোডশেডিং শুরু হলো। সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিল।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। কোনো গাড়ি চলছে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে? হল প্রভোস্টরা গেটে তালা দিয়েছে। তারা থ্রেট করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যারা কর্মরত,  তারা নৈতিকভাবে চেয়ারে বসার যোগ্যতা হারিয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যোগ্য না। সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, এটা আমাদের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি। কিন্তু সেটাকে টানতে টানতে এমন জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। আজকে আমাদের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার ও নিরাপত্তার বিষয়ে। তাই সারা দেশের শিক্ষার্থীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য।

শুভ বলেন, আজ বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মৃত্যু কূপে পরিণত হয়েছে। তাই সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান শিক্ষার্থীদের পাশে থাকুন। কারণ, শিক্ষাঙ্গন এখন আর নিরাপদ নেই। জাতির কথা চিন্তা করে সকলকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বানও জানান তিনি।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই, আমরা একটা দাবি নিয়ে রাস্তায় এসেছিলাম। কিন্তু তারপরে আমাদের ছাত্র বন্ধুদের গুলি করে খুন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্ত শাসনকে ধূলিসাৎ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা একটি জাতির জন্য দেশের জন্য অশনি সংকেত। আমাদের দাবি সরকার মেনে নিলে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে মতামতের ভিত্তিতে আমাদের আন্দোলন তুলে নেব। কিন্তু সারা দেশে শিক্ষাঙ্গনে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গণহত্যার মতো একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো, শিক্ষার্থীদের শত্রুপক্ষ মনে করে যেভাবে নির্বিচারে লাঠি ও টিয়ারগ্যাস প্রয়োগ করা হলো, এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যর বাসভবন অভিমুখে যাত্রা করে, তবে তাকে না পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুনরায় অবরোধকৃত মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
এমএস/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।