ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নর্থ সাউথের ৪ ট্রাস্টি শাহবাগ থানা হেফাজতে 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
নর্থ সাউথের ৪ ট্রাস্টি শাহবাগ থানা হেফাজতে 

ঢাকা: উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে আগাম জামিন আবেদন খারিজের পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ট্রাস্টিকে হেফাজতে নিলো শাহবাগ থানা পুলিশ।

রোববার (২২ মে) রাত ১১টার পর হাইকোর্ট থেকে প্রিজন ভ্যানে করে তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টির আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।  

একই সঙ্গে তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাহবাগ থানা পুলিশকে তাদের বিচারিক আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।

রোববার (২২ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত আদেশে বলেন, আবেদনকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনকারী অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেতে পারেন না। তাছাড়া আগাম জামিন পাওয়ার মতো যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য কারণ তারা আদালতকে দেখাতে পারেননি। যে কারণে আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হলো। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হলো, হেফাজতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন আসামিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতে আসামি রেহানা রহমান ও এম এ কাশেমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন, আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, মোহাম্মদ শাহজাহানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল। আর বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। তাদের সহযোগিতা করেন আইনজীবী মিজান সাঈদ।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।

শুনানিতে  আইনজীবী মিজান সাঈদ জামিন আবেদনকারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক পরিচয় তুলে ধরে বলেন, এই আবেদনকারীরা প্রত্যেকে এদেশের নাগরিক। তারা সবাই বয়স্ক। তার মধ্যে একজন নারীও আছেন। নিজেদের টাকায় তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুদক অনুমানের ভিত্তিতে মামলা করেছে। এই মামলায় তারা হয়রানী শিকার হলে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে। যে কারণে তারা আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। জামিন পেলে তারা পালিয়ে যাবেন না।   

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, বর্তমানকালে অর্থপাচার এবং দুর্নীতি হত্যার চেয়েও বিপজ্জনক অপরাধ। হত্যা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে মাত্র। অর্থপাচার বা দুর্নীতি দেশ-সমাজকে ধ্বংস করে।

জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাশ কাটিয়ে, টেন্ডার (দরপত্র) না করে অতিরিক্ত দাম দিয়ে জমি কিনেছেন। একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তাছাড়া আসামিদের জামিন আবেদনে কোথাও তারা বলেনি, দুদক তাদের হয়রানি করছে বা করতে পারে। জামিনের অপব্যবহার করে তাদের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের কাস্টডিতে দেওয়া হোক।

জামিন আবেদনকারী ট্রাস্টি মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির ঘটনায় মামলা হয়েছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, এ মামলার বিরুদ্ধে রিট মামলা করে আদেশ নিয়ে তিনি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়ে হাইকোর্টের সে আদেশে স্থগিতাদেশ নেয়। ওই মামলায় তিনি এখন জামিনে আছেন। সুতরাং তাদের জামিন দেওয়া হলে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অভিযোগ। এসব বিবেচনায় জামিন আবেদন খারিজ করা হোক।   

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাস্টি হলেন যাকে ট্রাস্ট করা হয়। একজন ট্রাস্টি হিসেবে যদি সেই ট্রাস্ট ভঙ্গ করেন তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই চার আসামি ট্রাস্টের টাকার সদ্ব্যবহার করেননি। নিজের স্বার্থে টাকা ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি কিনেছেন অতিরিক্ত দাম দিয়ে। বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। আপিল বিভাগের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতি গুরতর অপরাধ। আর অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় হাইকোর্ট তাদের জামিন আবেদন খারিজ করেছেন বলে মনে করি। ’

এরপর আদেশে আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেন। এ সময় বেনজীর আহমেদ কৌশলে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়েন। তখন কয়েকজন সংবাদকর্মী তার পিছু নিলে বিষয়টি একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের নজরে আসে। এরপর ওই সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে আবার আদালত কক্ষে নিয়ে যান।

রাতে লিখিত আদেশ পাওয়ায় এই চার আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ৫ মে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

তাদের মধ্যে রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ মঙ্গলবার (১৭ মে) হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে নামে ৯ হাজার ৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমাল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতাকে টাকা দেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। পরে নিজেরা এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও করেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
ইএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।