ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সব কারাগার, থানায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি প্রবর্তনের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২২
সব কারাগার, থানায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি প্রবর্তনের নির্দেশ

ঢাকা: বিদ্যমান ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে সব থানা ও কারাগারে আসামির হাতের আংগুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণির ছবিসহ বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আসামির ভুল পরিচয়ের কারণে ভুল বিচার ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি মঙ্গলবার (৫ জুলাই) এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


 
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।  
 
আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
 
 রায়ে আসামির ভুল পরিচয়ের কারণে ভুল বিচার ঠেকাতে তিনটি পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছ। এগুলো হলো- বিদ্যমান ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে দেশের সব থানায় আসামির হাতের আংগুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণি,  বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করা;
 
গ্রেফতারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি (Mugsgot photographs) ধারণ ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে (integrated )  আপলোড করা। আর কাউকে গ্রেফতারের পর এটাই থানার প্রথম কাজ হবে।  
 
দেশের সব কারাগারে আংগুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের মণির ছবি সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ সিস্টেম চালু করা।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেফতার করে। পুলিশের হাতে আটক হবার পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভাধীন আজগর আলী মোল্লাবাড়ী মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেয়। এরপর ওই বছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন।
 
এদিকে পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এ অবস্থায় জহির উদ্দিন যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মূল আসামি মোদাচ্ছের আনছারীর ছবি এবং শারীরিক বর্ণনাসহ বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে। পরে জহির উদ্দিন হাইকোর্টে রিট করেন।

জহির উদ্দিনের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ এক আদেশে ঢাকা মূখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করেন। একইসঙ্গে নোয়াখালীর ওই জহির উদ্দিন মামলার যথাযথ আসামি কী না- তা তদন্ত করে দুইমাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় গত বছরের ১৮ আগস্ট হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে কি অগ্রগতি হয়েছে তা আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।  

এ অবস্থায় পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম তদন্ত করে প্রতিবেদন পিবিআইয়ের ডিআইজি কার্যালয়ে দাখিল করেন। সেখান থেকে প্রতিবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমান পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতারি পরোয়ানাধারী ব্যক্তি নয়। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
 
শুনানি শেষে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানার এক মামলায় নোয়াখালীর মোহাম্মদ জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
 
ওই রায়ে উচ্চ আদালত বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২২
ইএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।