ঢাকা: কল্যাণপুরে জাহাজ বাড়িতে আস্তানায় অভিযানের ঘটনার ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার শুরু হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তদন্ত, পলাতক আসামিদের পরোয়ানা তামিল ও করোনা ভাইরাসে আদালত বন্ধ থাকায় বিচার শুরু হতে বিলম্ব হয়েছে।
২০১৬ সালের ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে জাহাজ বাড়িতে রাতভর অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সকালে এক ঘণ্টার মূল অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হন। আহত হন রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামে আরও একজন। অভিযানের দুদিন পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ জালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন।
এই মামলায় ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৯ সালের ৯ মে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস।
চার্জশিটে অভিযানে নিহত ৯ জন, নারায়ণগঞ্জে নিহত তামিম চৌধুরী ও আশুলিয়ায় নিহত সরোয়ার জাহানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এই মামলার আসামিরা হলেন- রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩), হাদিসুর রহমান সাগর (৪০) ও আজাদুল কবিরাজ।
এর মধ্যে আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর এবং আব্দুর রউফ প্রধান জামিনে আছেন। আর আজাদুল কবিরাজ পলাতক। হলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামির ৬ জন এই মামলায়ও আসামি।
মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে বদলির পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে সেই পরোয়ানা অনুযায়ী পুলিশ আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি। তাই ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর এই মামলায় পলাতক এক আসামিকে হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আদালতে জমা দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি আদালত মামলায় অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করেন। সেই থেকে আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি।
মামলার বিচার শুরুতে দীর্ঘ এই বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, মামলাটির তদন্তে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলায় একজন আসামি পলাতক। কোনো আসামি পলাতক থাকলে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। এজন্য বিচার শুরু করতে একটু সময় লাগে। ওই প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লেগেছে। সেই প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালে ও ২০২১ সালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিচারকাজ ব্যাহত হয়।
আগামী ধার্য তারিখেই মামলার চার্জগঠনের আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান মামলা, ব্লগার অভিজিৎ, প্রকাশক দীপন হত্যা মামলাসহ কয়েকটি আলোচিত মামলার বিচার দ্রুততার সঙ্গে শেষ করেছি। তবে বিভিন্ন কারণে এই মামলার বিচার শুরু হয়নি। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী ধার্য তারিখেই মামলার চার্জগঠন হবে বলে আশা করছি। চার্জগঠন হলে দ্রুতই সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২২
কেআই/এসআইএস