খুলনা: ২০২২ সালে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ১৭৩টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৭৭ জন।
সরকারি সংস্থা বিআরটিএর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিসংখ্যান মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কুষ্টিয়ায়। এ জেলায় ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪১ জন এবং আহত হন ২৫ জন।
এছাড়া, খুলনা জেলায় সংঘঠিত সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ২৭টি। এতে নিহত হন ২০ জন এবং আহত হন ১৫ জন। বাগেরহাট জেলায় সংঘঠিত ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৮ জন এবং আহত ৮৪ জন। সাতক্ষীরা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৩টি, এতে নিহত হন ৯ জন এবং আহত হন ৫০ জন।
যশোর জেলায় সংঘঠিত ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৪ জন এবং আহত হন ২০ জন। নড়াইলে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ২ জন এবং আহত হন ৬ জন। ঝিনাইদহে ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩ জন এবং আহত হন ১০ জন।
চুয়াডাঙ্গায় ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হন। মেহেরপুরে ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হন। মাগুরায় ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত এবং একজন আহত হন।
বিআরটিএ খুলনার সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অনেক কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো- পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, মাদকাসক্ত চালক, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানো। এছাড়াও হেলমেট বিহীন মোটরসাইকেল চালানোর কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা।
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খুলনায় মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্র, নসিমন-করিমন, বালুর ট্রাক এবং ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব যানবাহন নিয়ে যারা সড়কে নামছেন, তারা অধিকাংশই অদক্ষ চালক। সড়কে চলার নিয়মকানুন না জানায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন তারা। আর এর ফলে কখনো নিজেই মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন, আবার কখনো অন্যকে মারছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সম্প্রতি মোটরসাইকেলের আধিক্য এবং ছোট যানবাহনের চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা আরও বাড়ছে। সরকার মহাসড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ছোট অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছে। আর সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে আইন না মানার কারণেই দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। ফিটনেসবিহীন বাস-ট্রাক ও অবৈধ যানের অবাধে চলাচল, বালুবাহী ট্রাক, ইটভাটার ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের বেপরোয়া চলাচল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে অবিলম্বে প্রধান সড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা, সড়কের পাশ থেকে হাটবাজার সরাতে হবে, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে, অটোরিকশা মহাসড়কে উঠতে না দেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ ও হেলমেটবিহীন চালকদের কাছে পেট্রোল বিক্রি বন্ধ ও অবৈধ যানে যাত্রী বহনে নিরুৎসাহিত করতে প্রচারণা চালাতে হবে। আর এ কাজগুলো করতে পারলেই সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
এমআরএম/এনএস