ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ বহুদিনের। ভেতরে-বাইরে নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জাতীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন ঢামেকের বহির্বিভাগে গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই বেগ পেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনদের। অবৈধ দোকানপাটের পাশাপাশি পার্কিং করা যানবাহন ঘিরে রেখেছে প্রবেশপথ। তা ছাড়া গেটটিও সরু। হাসপাতালে ঢোকার মূল গেটটি (জাতীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন) শিকল দিয়ে তালাবন্ধ। তাই ছোট সরু গেট দিয়ে সেবাগ্রহীতাদের আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। বকশীবাজার এলাকা দিয়ে হাসপাতালে ঢোকার আরও প্রবেশ পথ আছে। সেগুলোর অবস্থাও কোনো না কোনো কারণে বিরূপ।
রোগী বা তার স্বজনদের বেশি অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের বাইরের অবস্থা নিয়ে। ভেতরে চিকিৎসা যা-ই হোক, বাইরের যে অবস্থা তাতে দেশের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তারা বলছেন, ঢামেক দেশের সমস্ত দরিদ্র শ্রেণির রোগীদের আস্থার প্রতীক। অথচ প্রতিষ্ঠানের বাইরে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং, ফুটপাতজুড়ে অসংখ্য দোকান-খাবার হোটেল, বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা; মনে হয় কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র হয়, ঢামেক যেন পুরাদস্তুর বাণিজ্য কেন্দ্র।
এ ছাড়া হাসপাতালের মেডিসিন স্টোরের কাউন্টারেও অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার কথা, সেখানেই ভয়াবহ অবস্থা। রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ওষুধ নিতে পারছেন না। কাউন্টারে স্যালাইন ভর্তি কার্টন রাখায় সেবাদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পেটে ব্যথা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক রোগীর সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। বিখ্যাত হাসপাতালের অখ্যাত অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যানবাহনের অবস্থান ও অবৈধ দোকানপাটের কারণে বহির্বিভাগের গেট দিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করা দুরূহ। বহির্বিভাগ মেডিসিন স্টোর থেকে ওষুধ যে নেব, সে কায়দাও নাই। কাউন্টার বাঁধাগ্রস্ত করে স্যালাইন ভর্তি কার্টন রাখা হয়েছে। হাসপাতালে ঢোকার সময় মনে হয়েছে এটি কোনো হাসপাতাল নয়, বাণিজ্য কেন্দ্র।
হাসপাতালে আসা আরও রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই তথ্য পাওয়া গেছে। কেউ ভেতরকার পরিবেশ নিয়ে নাখোশ। কেউ বাইরের অবস্থা নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। তারা বলছেন, একটু সদিচ্ছা থাকলেই দেশ বিখ্যাত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটিকে ঝকঝকে-তকতকে রাখা যায়। প্রতিটি জায়গা সুন্দর রাখা যায়। অবৈধদের প্রতিরোধ করাও সহজ। কিন্তু তা না করে রোগীদের উপেক্ষা করা হয়। বিভিন্ন কারণে বাধা পাওয়ায় সেবা নিতেও বেগ পেতে হয়।
বহির্বিভাগের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ওয়ার্ড মাস্টার আবুল বাশার রোগীদের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে বলে জানান। আরও বলেন, আনসার সদস্যদের নিয়ে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে তারা দফায় দফায় টহল দিচ্ছে। হাসপাতালে চত্বরে যেখানে মোটরসাইকেল রাখা হয়েছে সেটা পার্কিং স্থান বলেও তিনি দাবি করেন।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যদের প্রধান প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) আব্দুর রউফ তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার কথা বলেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরে যেন অবৈধ কিছু না থাকতে পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
বাংলানিউজ থেকে ফোন পেয়ে মেডিসিন স্টোরের কাউন্টার ফাঁকা করে দেওয়ার কথা বলেন বহির্বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, রোগীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে ওষুধ নিতে পারেন সেজন্য কাউন্টার ফাঁকা করে দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে কথা হলে ঢামেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বহির্বিভাগ সংলগ্ন যে সড়কে অবৈধ দোকানগুলো বসে বা যানবাহন পার্কিং করে, সেটি মূলত আমাদের নয়, সিটি করপোরেশনের। আমরা মাঝে মাঝে চিঠি দেই। সিটি করপোরেশন এসে উচ্ছেদ করে। কিন্তু তারা (অবৈধ দোকানি) আবার এসে বসে। এ ছাড়া হাসপাতালের ভেতরকার যেসব সমস্যা রয়েছে জানা গেছে, আমি সেগুলো দেখছি। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
এজেডএস/এমজে