ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাঙ্গাইলে দালালের মাধ্যমে অন্য জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করছে বিএডিসি

সুমন রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
টাঙ্গাইলে দালালের মাধ্যমে অন্য জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করছে বিএডিসি

টাঙ্গাইল: নির্ধারিত কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও টাঙ্গাইলের বিএডিসি কর্তৃপক্ষ দালালের মাধ্যমে জেলার বাইরে থেকে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করে গুদামজাত করছে।  

এ নিয়ে টাঙ্গাইলের প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

তবে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বলছেন জেলার বাইরে থেকে যে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বিএডিসির ধান সংগ্রহের তালিকায় জেলার বিভিন্ন কৃষকদের নাম থাকলেও সেই কৃষকরা ধান দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না।

কৃষকদের অভিযোগ সরকারিভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে না। বিএডিসি কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কয়েকজন দালালের মাধ্যমে জেলার বাইরে থেকে জামালপুর, সরিষাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে টাঙ্গাইলের বিএডিসিতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট মিনি ট্রাক নিয়ে ধান বিক্রি করতে এসেছেন কয়েকজন ব্যক্তি। এসময় এক ব্যক্তি জানান, ভাতকুড়া গ্রামের কয়েকজন কৃষকের ধান এনেছেন তিনি। তবে কোন কোন কৃষকের ধান এনেছেন তারা সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তিনি।

এসময় এই ধান বহনকারী ট্রাকের চালক সুজায়েত হোসেন জানান, তিনি ধানগুলো নিয়ে জামালপুর থেকে টাঙ্গাইলের বিএডিসিতে এসেছেন। আর ধানগুলো কোথা থেকে কেনা হয়েছে তা এর মালিক বলতে পারবেন।

এসময় ধান সংগ্রহের তালিকায় দেখা যায়, গত ১২ জুন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ভাতকুড়া গ্রামের কৃষক ফরিদুলের ব্রি-২৯ জাতের ২৫ বস্তা ও আজাহারের ব্রি-২৯ জাতের ৭২ বস্তা, আয়নালের কাছ থেকে ৩৮ বস্তা ধান কেনা হয়েছে।

তবে ভাতকুড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক ফরিদুলের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৬৫ শতাংশ জমিতে তিনি ধান রোপণ করেছিলেন। সব ধান তিনি স্থানীয় হাটে বিক্রি করেছেন। সরকারিভাবে তিনি কোনো ধান বিক্রি করেননি। তবে সরকারি তালিকায় তার নাম কীভাবে এলো তাও তিনি জানেন না।

একই কথা বললেন আজাহার। তিনিও সরকারিভাবে কোনো ধান বিক্রি করেননি। তিনি সব ধান হাটে বিক্রি করেছেন।

কৃষকদের অভিযোগ স্থানীয় দালাল আলিম ও সোহেলের মাধ্যমে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জেলার বাইরে থেকে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করছেন। দুই দিনদিন আগে আলিম ও সোহেলের কাছ থেকে ১৯শ’ বস্তা ধান কেনা হয়েছে। আবার জামালপুর থেকে ধান নিয়ে এসেছেন তারা। এ কারণে বিএডিসির ইনচার্জ রাশেদ এবং সরোয়ারকে দিতে হয় বাড়তি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএডিসির একজন কর্মচারী জানান, বেশির ভাগ ধান সংগ্রহ করা হয় কয়েকজন দালালের মাধ্যমে। আর সেই দালালরা টাঙ্গাইল এবং পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে নিম্নমানের ধান কম মূল্যে কিনে সরকারিভাবে সরবরাহ করে থাকে। আর সেই সরবরাহ করা তালিকায় জেলার বিভিন্ন কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। অথচ সেই কৃষকরা জানে না তাদের কাছ থেকে সরকার ধান সংগ্রহ করছেন। এর মধ্যে যদি কোনো কৃষক তাদের ধান বিক্রি করতে আসেন তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় ধানের নমুনা নিয়ে আসতে। পরবর্তীতে ধান দেখাতে এলে বলা হয় ধানগুলো নিম্নমানের তাই এগুলো সরকারিভাবে নেওয়া সম্ভব নয়। পরে ওই কৃষক ধানগুলো হাটে বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিনি আরও জানান, কৃষক যে ধান বাইরে বিক্রি করেন সেই ধানের তুলনায় দালালের মাধ্যমে যে ধান কেনা হয় সেগুলো খুবই নিম্নমানের। বাড়তি টাকার বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ এই নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করছেন।

বিএডিসির মধুপুর জোন টাঙ্গাইলের উপপরিচালক (ক. গ্রো.) মোহা. শহীদুল্লাহ আল-মামুন বাংলানিউজকে জানান, জামালপুর থেকে যে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে সে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ নিয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া দালালের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করে প্রকৃত কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।