খুলনা: খুলনায় এবার ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। যার কারণে ভুট্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ কম।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, খুলনায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম, কিন্তু দাম অনেক ভালো। সেই সঙ্গে ভুট্টার গাছ গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে বাজারে ভুট্টার চাহিদাও অনেক বেশি। ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খুলনায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৩৯০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়। এ বছর ৪১২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ভুট্টা চাষ বৃদ্ধিতে তিন হাজার চাষিকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে দুই কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের প্রাণিখাদ্যের বাজার ভুট্টার ওপর নির্ভরশীল। মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদন বাড়ায় ভুট্টার খাবারের চাহিদাও বাড়ছে। দেশের শতাধিক কোম্পানি এসব খাদ্য প্রস্তুত করছে।
ডুমুরিয়ার কালিকাপুর মো. আজিজুর ফকির জানান, তার ২৭ শতাংশ জমিতে একত্রে বাঁধাকপি ও ভুট্টা চাষ করেছেন। পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে এ পর্যন্ত তিনি ২৫ হাজার টাকার বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন। এছাড়াও ভুট্টা থেকে ১২/১৫ হাজার টাকা আয় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ভুট্টা গাছ বড় হয়ে ছায়া দেওয়ার আগেই বাঁধাকপি উঠে যাচ্ছে। তাই ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।
কয়রা উপজেলার বৈরাগীর চক গ্রামের মনিন্দ্র জানান, তিন বছর ভুট্টা চাষ করেছি। বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে ১২/১৩ মণ ভুট্টার দানা পাওয়া যায়। এবছর কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার পেয়েছি। তবে এবার জমিতে আবাদ করতে দেরি হয়ে গেছে।
একই উপজেলার কুশুডাঙ্গা গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, সরকারি সহায়তা পেয়ে এবছর এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। বিগত সময়ে ওই জমিতে এ মৌসুমে কোনো ফসল আবাদ করা হত না। আশা করছি, ভালো ফলন পাবো।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, এ বছর ৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এ উপজেলায় বাঁধাকপির সঙ্গে একই জমিতে সহায়ক ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। একই জমিতে দুই ফসল চাষ বেশ লাভজনক। একই সার ও কীটনাশকে একটি ফসল উঠে গিয়ে পুষ্ট হচ্ছে ভুট্টা গাছ। আলুর সঙ্গে ভুট্টা চাষ লাভজনক।
কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা কৃষকের মধ্যে বীজ ও সার প্রণোদনা দিয়েছি। আশা করছি কৃষকরা লাভবান হবেন। এবছর কয়রা উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আগামীতে উপজেলায় ভুট্টা চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার পার্টনার প্রোগ্রাম মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ভুট্টা লবণ সহিষ্ণু ও সেচ পানি কম লাগায় এবং বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে ফসলটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া ভুট্টার সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে লালশাক, পালংশাক চাষ করা যায় বলে কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছেন। এটি সম্প্রসারণে সার, বীজ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খুলনায় এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। কৃষকদের বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করার পাশাপাশি আমাদের মাঠ কর্মীরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪
এমআরএম/এসএম