ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জনগণের জন্য কাজ করুন: সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৪
জনগণের জন্য কাজ করুন: সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জনগণের কাছে যেতে এবং জনগণের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (মার্চ ০৬) রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এর বার্ষিক সম্মেলন-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত নৈশভোজে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সরকারের সব কার্যক্রম দেশের মানুষের কল্যাণে। আমি আপনাদের সবাইকে এ আহ্বান জানাবো যে মানুষের পাশে যান, মানুষের জন্য কাজ করেন।

তিনি বলেন, করোনা অতিমারিসহ সব দুর্যোগেই আপনারা কাজ করে যাচ্ছেন, দায়িত্ব কিন্তু এখনও রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে, ততক্ষণ আপনাদের কাজগুলো আপনাদের করে যেতে হবে। সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে এ আহ্বান জানাবো যে মানুষের পাশে যান, মানুষের জন্য কাজ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় যেভাবে গণহত্যা চলছে তার প্রভাবটা অর্থনীতির ওপর পড়েছে। আমরা কিন্তু সেখান থেকে দূরে নই। কাজেই যে মূল্যস্ফীতির চাপটা আমাদের ওপর পড়ে গেছে তার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাপী মন্দার এ প্রভাবে ডলারেরও মূল্য বেড়ে গেছে। আমদানি মূল্য বেড়ে গেছে। পরিবহন পরিচালন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। কাজেই আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি হবে জনগণকে কেন্দ্র করে। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জ্ঞান ভিত্তিক ও কল্যাণমুখী দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন আমরা গড়ে তুলতে চাই। যাতে জনগণ উন্নত এবং মানসম্মত সেবা পায়। আমাদের সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর। সেই কাজটা আপনাদেরই করতে হবে।  

আমাদের লক্ষ্য, আমাদের স্মার্ট সিটিজেন হবে, স্মার্ট ইকনোমি হবে, স্মার্ট গভর্নমেন্ট হবে এবং স্মার্ট সোসাইটি হবে। দেশকে আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং বিশ্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, যোগ করেন তিনি।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কথা খুব স্পষ্ট। আমরা ইশতেহার দিয়েছি। আমরা কিন্তু এ নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে অঙ্গীকার করে আসি। আর সেই ইশতেহার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আজকের দেশটা কিন্তু বদলে গেছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি বাজেটে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারটা অনুসরণ করতাম বলেই এ পরিবর্তনটা করতে পেরেছি। পাশাপাশি বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময় সময় এর সংযোজন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করতে হয়, যেটা আমরা করি।

‘সব সময় জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’ সংবিধানের ২১ এর (২) এ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে কিন্তু জনসেবার কথাটা বারবার বলা হয়েছে এবং জাতির পিতা শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিজেকেই জনগণের সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীত্ব বড় কথা নয়, জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়াটা, তাদের কল্যাণ করাটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।

জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করেই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী নয়, বাংলাদেশের জনগণের সেবক হিসেবেই বিবেচনা করি।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেন নির্বাচনটাই না হয়, এবারের নির্বাচনে তারা (বিএনপি) সে রকমই একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। আমি জানি, এ নির্বাচনটা নিয়ে অনেক চক্রান্ত, যে কারণে আমি নিজেও রিস্ক নিয়েছি। আপনারা জানেন, সংসদীয় পদ্ধতির গণতন্ত্রে আমরা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারি, তাহলেই কেবল সরকার গঠন করতে পারব। আর না হলে পারব না। তারপরও নির্বাচন যেন গণমুখী হয়, মানুষ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসে এবং নির্বাচনটা যাতে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও জবাবদিহিমূলক হয়, সেটা করার জন্য আমরা একদিকে যেমন আমাদের নমিনেশন দিয়েছি আর অন্য দিকে নির্বাচনটা আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসহ সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে আপনারা জনগণের ভোটের যে সাংবিধানিক অধিকার, তার যেমন সুরক্ষা দিয়েছেন, তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি আপনাদের যে দায়িত্ব কর্তব্য সেটাই পালন করেছেন। সেজন্য মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেছেন সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকারের একটা ধারাবাহিকতা আছে, যে কারণে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। সুফলটা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ এর সুফলটা পেলেও দেশের কিছু মানুষ আছে, যাদের উন্নয়নটা বোধহয় পছন্দ হয় না। আবার তার ওপর কিছু বিদেশি প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা হয়। আমরা স্বাধীন দেশ, আমরা মুক্তভাবে চলব। আমাদের দেশকে আমরা গড়ে তুলব।

উন্নয়ন সহযোগীদের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিই ঋণ হিসেবে এবং তার সুদসহ আমরা ফেরত দিই। কিন্তু আমাদের দেশের উন্নয়নের কাজ আমরা যতটুকু বুঝব, বাইরের কেউ এসে তা বুঝবে না। আমার দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা তাদের মানসিকতা, আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করেই আমরা পরিকল্পনা নেব এবং তা বাস্তবায়ন করব। সেখানে আমরা খবরদারি শুনতে রাজি নই বরং আমরা যেভাবে চাই, সেভাবেই উন্নয়নের পরিকল্পনাটা করতে হবে। সেটাই আমার কথা।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৪
এমইউএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।