ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা এক মামলায় চার নম্বর আসামি হয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহাবুব হোসেন। তবে তিনি বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) যাত্রাবাড়ী থানায় এই হত্যা মামলা করেন ছাত্র-আন্দোলনে শহীদ মেহেদীর চাচা মো. নাদিম।
এতে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন।
মো. মাহাবুব হোসেন ছাড়াও আরও আসামি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও আহমেদ কায়কাউস, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও ফয়েজ আহমেদ এবং সাবেক সচিব আনিসুর রহমানকে (নির্বাচন কমিশনারও ছিলেন)।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক আহম্মেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগে গত ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন কামরাঙ্গীরচরের টেকেরহাট ইউনিট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোকনসহ অন্য নেতারা ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে সশস্ত্র হামলা করেন। ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে বুলেট ও গুলি ছোড়া হয়। একপর্যায়ে মেহেদী হাসান (১৮) নামের এক তরুণের থুতনিতে গুলি লাগে। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে মামলার ৪ নম্বর আসামি মো. মাহাবুব হোসেনকে আলোচনার তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মাহবুব হোসেনের আগে আরো ২৩ জন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। তবে তাদের মধ্যে মাহবুব নামে কেউ নেই। ফলে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনকেই মামলার আসামি করা হলো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
মামলার বিষয়টি নিয়ে রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু তিনি কারও ফোন ধরেননি। পরে তার একান্ত সচিব কাজী শাহজাহানের মোবাইলফোন নম্বরে কল করা হয়। তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক দুজন মুখ্য সচিবকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ। এর মধ্যে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন আর আবুল কালাম আজাদ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে তার বিরুদ্ধে অন্তত ২২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৩টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও সাবেক বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিগত সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২৪
এসএএইচ