ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ: রিপোর্ট

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ: রিপোর্ট

জামায়াত নেতা মীর কাসেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেমের স্ত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে।

আরেক সংবাদমাধ্যম চ্যানেলর ফোরের একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানায় ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

খবরে বলা হয়, জামায়াত নেতা মীর কাসেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম যিনি ব্যারিস্টার আরমান হিসেবেও পরিচিত, তিনি ২০১৬ সালে গুম হয়েছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে দীর্ঘ আট বছর পর বাড়ি ফেরেন তিনি।

গুমের আগে আরমান ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি ফিরে আসার পর তাকে বেশ রোগাক্রান্ত দেখা গেছে। এই আইনজীবীর ব্যাপারে জানতে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক লেবার পার্টির তৎকালীন এমপি ও বর্তমান মন্ত্রী টিউলিপকে প্রশ্ন করেছিলেন। টিউলিপ তাকে সহজ উত্তর তো দেননি। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন।

ঘটনাটি ২০২৭ সালের। টিউলিপ যেহেতু ব্রিটেনের নাগরিক ও এমপি ছিলেন চ্যানেল ফোরের ওই সাংবাদিক মনে করেছিলেন, শেখ হাসিনার কাছে একটি ফোন করলে আরমান হয়ত মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু ক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া টিউলিপ তার তার ক্ষমতা ও প্রশাসনকে দিয়ে আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করান।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ব্যারিস্টার আরমান বলেছেন, চ্যানেল-ফোর প্রতিবেদনটি প্রচার করার কয়েক ঘণ্টা আগে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী আমার বাড়িতে যায়। আমার স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলে। বাইরের দেশের কার কার সঙ্গে আমার স্ত্রীর যোগাযোগ আছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করে যেন কোনো সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমার ব্যাপারে টিউলিপকে জিজ্ঞেস করার বিষয়টি কোনোভাবে যেন শেখ পরিবারকে আঘাত করেছিল। এ কারণে প্রশাসন থেকে এমন আচরণ করা হয়েছিল।

খবরে বলা হয়েছে, ২৫ নভেম্বর ২০১৭; চ্যানেল-ফোরের ওই সাংবাদিক টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি টিউলিপকে এও বলেন, আপনার একটি ফোন কল অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এ কথা শুনে রেগে যান তিনি। উল্টো প্রশ্ন করেন, আরমান কী আমার সংসদীয় আসনের কেউ? তিনি কী ব্রিটিশ?

জবাবে তাকে সাংবাদিক বলেন, আরমান বাংলাদেশি। তার পরিবার আপনার কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছে কিছু করার জন্য। এ কথা শুনে টিউলিপ বলেন, আপনি কি জানেন আমি ব্রিটিশ এমপি এবং আমার জন্ম হয়েছে লন্ডনে।

তাকে বলা হয়, কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আপনার গভীর সম্পর্ক আছে। আপনি নিজেই বলেছেন আপনি আওয়ামী সরকারের মুখপাত্র। আপনার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ কথা শুনে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ‘ফ্ল্যাটকোণ্ডে’ চাপে পড়া লেবার পার্টির বর্তমান মন্ত্রী। তিনি রাগ দেখিয়ে বলেন, আপনি কী বলতে চান আমি বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ? আমি ব্রিটিশ এমপি। আমাকে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ বলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

এ কথা বলে টিউলিপ চলে যেতে ধরলে ওই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, আপনি আরমানের ব্যাপারে একটি ফোন দিতে পারবেন না? কেন পারবেন না?

ব্যারিস্টার আরমান লন্ডনে পড়ালেখা করেছেন। ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বাবার বিচার চলাকালে তিনি তার আইনজীবীর ভূমিকা পালন করছিলেন। ঠিক তখনই তাকে গুম করা হয়।

আরমানের ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল পলক বলেছেন, চ্যানেল-ফোরকে যেন ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রী বলেন- ‘প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে’, সেজন্য তার বাড়িতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা গিয়েছিল। একজন ব্রিটিশ এমডিকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলো। আর তারপরই র‌্যাবের মতো বাহিনীর কাছ থেকে তার পরিবার হুমকি পেল; যে বাহিনী হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস টিউলিপ সিদ্দিক ও তার দল লেবার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কেউই কোনো কথা বলেনি। তবে টিউলিপের এক সহযোগী বলেছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয়টি নিয়ে ফরেন অফিসে পত্র পাঠানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।