ঢাকা: ‘আমার ২৫ বছরের সাজানো সংসার চোখের পলকে পুইড়া ছাই। জীবনে অনেক কষ্ট কইরা তিলে তিলে করছিলাম এই সংসার!’
আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মিরপুরের কালশী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাউনিয়াবাঁধের ‘বি’ ব্লকের পুকুরপাড় বস্তির বাসিন্দা শুক্কুর আলী।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে বস্তিটিতে লাগা আগুনে সর্বস্থ হারিযেছেন তিনি। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের এক ঘণ্টার চেষ্টায় ওিই বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে বাউনিয়াবাঁধের পুকুরপাড় বস্তির বাসিন্দা শুক্কুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, রাত একটার সময় খাম্বার ট্রান্সমিটারে আগুন লাগে। আমরা চার-পাঁচজন আগুন নিভাই। এলাকায় কারেন্ট চইলা যায়। তখন চায়ের দোকানে বইসা ছিলাম। কারেন্ট আসলে ঘরে যাই। তখনই পাশের একটা ফাঁকা ঘর খাইকা আগুন ও ধোঁয়া বাইর হইতে দেখি। লগে লগে আমার পরিবার ও মাইয়ারে লইয়া ঘর থাইকা বাইর হই। এক কাপড়ে ঘর থাইকা বাইর হইয়া আসি।
ঘরে কী কী ছিল জানতে চাইলে শুক্কুর আলী বলেন, আমার ঘরে টিভি, দুইটা আলমারি, দুইটা খাট, চেয়ার-টেবিলসহ সংসারের অনেক জিনিসপত্র ছিল। কিস্তিতে ফ্রিজ কিনছিলাম, তাও আগুনে পুইড়া গেছে! ঘরের আলমারিতে নগদ ২০ হাজার টাকা ছিল। সকালে ছাই ছাড়া আর কিছুই খুঁইজা পাইলাম না। আমার বড় ভাইয়েরও দুইটা ঘর পুইড়া গেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাইক্রোবাস চালক শুক্কুর আলী বলেন, আমার ২৫ বছরের সাজানো সংসার চোখের পলকে পুইড়া ছাই! জীবনে অনেক কষ্ট কইরা তিলে তিলে করছিলাম এই সংসার। টাকা রোজগারের জন্য কী করি নাই জীবনে? মাটি কাটছি, রিকশা চালাইছি, বাসের হেলপারি করছি, শ্রমিকের কাম করছি।
বস্তির আরেক বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, ঘুমায়ে আছিলাম। আগুন আগুন চিৎকার শুইনা ঘুম ভাঙে। ঘরের চাল পুইড়া আগুন পড়তে দেখি। ছোট বাচ্চাটারে কোলে নিয়া কোনোমতে ঘর থাইকা বাইর হইছি। বড় ছেলের পরীক্ষার জন্য ১০ হাজার টাকা জমায় রাখছিলাম। সেই টাকা নিয়া বাইর হইতে পারি নাই।
বাউনিয়াবাঁধের বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ অগ্নিকাণ্ডে ঘর ও দোকানপাট মিলিয়ে প্রায় ৫০-৬০টি স্থাপনা পুড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২০
এমএমআই/এমজেএফ