ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক কর্মকাণ্ডের ৫ম বছরে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও অংশীদার সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগণের কল্যাণে দৃঢ় ও টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছে।
এ লক্ষ্যে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) কর্মসূচিতে ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল চাওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য ২০২২ সালের জেআরপি মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) প্রস্তাবিত হচ্ছে। কক্সবাজার ও ভাসান চরে অবস্থিত প্রায় ৯ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশে-পাশে থাকা প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশি মিলিয়ে মোট প্রায় ১৪ লাখ মানুষের সহায়তার জন্য এই জেআরপি-তে প্রায় ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল চাওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ২০২২ সালের জেআরপি অনুযায়ী কাজ করবে ১৩৬টি সংস্থা, যার মধ্যে ৭৪টি হচ্ছে বাংলাদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন। মানবিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে শরণার্থীদের অবদানও তাৎপর্যমূলক।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার কয়েক দশক ধরে উদারভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। বর্তমানে যখন বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ইউএনএইচসিআর ও অংশীদার সংস্থাগুলো নিশ্চিত করতে চাচ্ছে যেন পৃথিবী রোহিঙ্গাদের মানবিক সঙ্কটকে ভুলে না যায়। সেজন্য শরণার্থীদের ও তাদের আশে-পাশে থাকা স্থানীয় জনগণের প্রয়োজন মেটাতে চলমান অর্থায়ন ও সহায়তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক৷
ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করলে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এ বছরের জেআরপি তাই পুনঃবনায়ন ও জ্বালানি সহায়তাসহ দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের জন্য বর্ধিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
এই মানবিক সংকটের সমাধান শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারেই নিহিত। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি অনুকূল হলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে। শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ইউএনএইচসিআর ও অংশীদার সংস্থাগুলো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের উপস্থিতি বজায় রাখছে। যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরতে না পারছে, ততদিন তাদের জীবন রক্ষাকারী সুরক্ষা ও সহায়তা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সহায়তা অতীতের মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন নিরাপদ মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিত করাও জরুরি। এর পাশাপাশি তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়নেরও প্রয়োজন রয়েছে, যেন তারা ভবিষ্যতে টেকসই প্রত্যাবাসনের পর তা কাজে লাগাতে পারে।
এই প্রথমবার জেআরপিতে ভাসান চরের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ২৪ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেখানে স্থানান্তর করেছে। স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, পুষ্টি, শিক্ষা, জীবিকা ও দক্ষতা তৈরিসহ চরে চলমান প্রয়োজনীয় মানবিক সেবাসমূহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময় ১৪৪১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
টিআর/এসআইএস