ঢাকা: একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের পরিচালিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দীর্ঘ ৫১ বছরেও আদায় হয়নি।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নেদারল্যাণ্ডসের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রপ (বাসুগ), আমরা একাত্তর ও প্রজন্ম ৭১ নামে তিনটি সংগঠন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, 'তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। এই দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জরুরি'।
তিনি বলেন, জাতিসংঘে গণহত্যার ঘটনায় বাংলাদেশের জন্য যে সময় বরাদ্দ আছে, সে সময়ে বিষয়টি বিশ্ববাসীকে অবহিত করা হবে। এতে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত হবে। কেউ যেন মিথ্যাচার ও অসত্য তথ্য দিয়ে দিয়ে এ ঘটনাকে (গণহত্যা) হালাল না করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সব দূতাবাসে বিষয়টি পৌঁছে দিচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়কারী হিলাল ফয়েজী বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। পৃথিবীতে এতো স্বল্প সময়ে এতো মানুষ হত্যার রেকর্ড নেই। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে ও সারাদেশে ব্যাপক লুটতরাজ চালিয়েছে। দুই লাখ মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনতা হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে স্বপরিবারে হত্যার পর সেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা বিরোধীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচার শুরু করেছে। রাজাকার-আলবদরদের তালিকা তৈরি জন্য সংসদে আইন পাস হয়েছে। আশাকরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলগুলোর নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন বাতিল করবে।
ইউকসুর সাবেক জিএস ইঞ্জিনিয়ার হেলাল ফয়েজী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫১ বছরে পদার্পন করলেও মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত নৃশংস গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আজো মেলেনি। সেই স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংগঠন আমরা একাত্তর, প্রজন্ম ৭১ ও নেদারল্যান্ডসের প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন বাজুগ কাজ করে যাচ্ছে।
এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবির লড়াইয়ে নেমেছি।
মুক্তিযুদ্ধকালের এ ছাত্রনেতা আরও বলেন, এ বছর জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের (UNHCR) ৫১ তম অধিবেশনে ৩ নম্বর এজেন্ডায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘঠিত গণহত্যার ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাসুগ, আমরা একাত্তর ও প্রজন্ম ৭১-এর সম্মিলিত আবেদনে এই এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করানো হয়েছে। বাসুগের উদ্যোগে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ আগামী ৩ অক্টোবরে একঘণ্টার জন্য জেনেভার একটি হল বরাদ্দ করেছে।
প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি ও শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর বলেন, গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন। এখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আছে, সেজন্য অন্যান্য দেশের গণহত্যার স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু আমাদের সুযোগ রয়েছে, যেহেতু জাতিসংঘ ভবনে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, চলমান কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে একটি মোমেন্টাম তৈরি হচ্ছে। আমরা যদি এটি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি ৯ ডিসেম্বরের আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে যেন বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়।
স্বীকৃতি আদায়ে ঘোষিত কর্মসূচি-
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন।
২ অক্টোবর বিকেল ৪ টায় নিউইয়র্ক জাতিসংঘ ভবনে, লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সম্মুখে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এবং কানাডার টরোন্টো ও মন্ট্রিলে সমাবেশ ও মানববন্ধন।
৩ অক্টোবর বিকেল ৩ টায় জেনেভাস্থ জাতিসংঘ ভবনে আলোচনা। আর এদিন ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে।
এছাড়াও বাংলাদেশের চিহ্নিত বধ্যভূমিগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রজন্ম একাত্তরের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ রেজা নূর, 'আমরা একাত্তর'-এর সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক জিএস মাহবুব জামান শওকত, সংগঠনের প্রধান পরিচালক ও সংগঠক আব্দুর রশিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
এনবি/এমএমজেড