ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

শরৎ || প্রভাতলোকে শুভ্রতার আবহ 

নাঈমুল রাজ্জাক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
শরৎ || প্রভাতলোকে শুভ্রতার আবহ 

বাংলার প্রকৃতিতে এখন বিরাজ করছে শরৎ কাল। শরৎ এর যৌবন খুবই অল্প সময়ের।

শরৎ তার রূপমাধুরীতে রাঙিয়ে দেয় প্রকৃতির প্রতিটি প্রহর। শরতে প্রকৃতি থাকে শুভ্র-সতেজ। মেঘাছন্ন আকাশ ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে পরিপাটি। ষড়ঋতুর এ দেশে শরৎ হলো শুভ্রতার প্রতীক, স্বচ্ছ রোদের প্রভাতলোকে শরৎ এর আসল চেহারা ফুটে ওঠে হেমন্তের পূর্বে। এ সময় স্নিগ্ধতায় বিমোহিত থাকে মন। প্রকৃতির বুকে, শুভ্রতার উৎকৃষ্ট নিশ্বাসেও জেগে ওঠে প্রণয়ের রেখা, বেজে ওঠে হৃদয়ের সুর আলোকিত স্বস্তির ভেতরে।  

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎ নিয়ে বলেছিলেন তার কবিতায়, ‘এই শরৎ-আলোর কমল-বনে/ বাহির হয়ে বিহার করে,/ যে ছিল মোর মনে মনে। তারি সোনার কাঁকন বাজে,/ আজি প্রভাত কিরণমাঝে, হাওয়ায় কাঁপে আঁচলখানি,/ ছড়ায় ছায়া ক্ষণে ক্ষণে। ’

উদাসীন প্রকৃতির স্নিগ্ধ মধুর কাব্যিক উপমা। যা বিমোহিত করে মনকে। প্রকৃতির বুকেও থাকে শুভ্র- সতেজতা। যা সৌন্দর্যে অনন্য। শরৎ এর প্রতিটি প্রহরেই শিরা উপশিরায় প্রবাহিত মুগ্ধতার পদধ্বনি। সন্ধ্যার প্রফুল্লতা মানুষের ভেতর জগৎ, প্রকৃতিকে করে তোলে লাস্যময়ী।

শরৎ এ চারিদিকে মৃদু ছায়ায় স্বপ্নগুলো নেচে উঠে, অসংখ্য স্বপ্নচারীর ইন্দ্রের অনুগত বিন্যাসের মতো, রূপালী রাতও প্রাণ খোলা উৎসবে মেতে উঠে যেমন আলোকিত স্বস্তির ভেতর। মৃদু ছায়াও সৃষ্টি হয় বৈচিত্র্যের সুর।

শরৎ শান্ত ও মধুর। অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত থাকে প্রকৃতি ও মানুষ। চারদিক হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। উদাস করে তোলে হয়তো মনকে। নান্দনিক রূপ প্রকাশ পায় রাতের নীল আকাশে। শরৎ তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতায় অনন্য। সুশোভিত করে তোলে দেহ-মন সারাক্ষণ। প্রকৃতির রূপলাবণ্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। সৌন্দর্যবোধ, চেতনা থাকলেই শরৎ প্রকৃতির সৌন্দর্য চোখে পড়বে। তবে বেশিরভাগ সময়ই আকাশজুড়ে ভেসে বেড়ায় তুলার মতো শুভ্র মেঘগুলো।

শরৎ এর আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় যেন কোনো চিত্রশিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়ে সযত্নে আঁকা সুনিপুণ এক চিত্রকর্ম। সে এক কাব্যিক অনুভূতি, যা কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনকে ভাবুক করে তোলে। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততায় জানালার গ্রিলের ফাঁকে এক টুকরা গাঢ় নীল আকাশ আর শুভ্র মেঘের ছোটাছুটি। মানুষের নাগরিক চোখকে স্বস্তি দেয়, দেয় সতেজতা, প্রাণচাঞ্চল্য।

ঋতুরাজ বসন্তের যেমন রয়েছে রঙের বা বর্ণের ঐশ্বর্য আর রূপের রাজকীয় অহঙ্কার; শরৎ এর তেমন সৌম্য, নির্মল সৌন্দর্য আর শান্ত ভাবমূর্তি। নগরজীবনে হরহামেশা এসব ফুল দেখা যায় না শরৎকালে এমন ফুল দেখা যায়। একঘেয়ে জীবনে ফুলের উপস্থিতি সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়, মনটাও থাকে সতেজ। শরৎ এর প্রকৃতির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মৃদুমন্দ বাতাসে সবুজ ধানের কচি পাতাগুলো একসঙ্গে দুলতে থাকা। এর সৌন্দর্যও ব্যাখ্যাতীত।

শরৎ আসে মানুষের মনের আঙিনায়। গ্রামীণ জীবনেই এর উপস্থিতি বেশি টের পাওয়া যায়। কারণ, গ্রামে প্রতিটি ঋতুই আপন আপন রূপবৈচিত্র্যে অধিষ্ঠিত। পর্যায়ক্রমে প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তন। তাই প্রকৃতিও জীবন্ত।

শরতের প্রকৃতি বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতিতে যেমন প্রভাব বিস্তার করে। মধ্যযুগের কবি চণ্ডীদাস, মহাকবি কালিদাস থেকে শুরু করে আধুনিক লেখক, কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় শরৎ বন্দনা দেখা যায়। সাহিত্য-সংস্কৃতি তো আছেই। শরৎ এর প্রকৃতির এ সৌন্দর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেও সজ্জিত হতে পারেন।

দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস প্রতি বছরই নিয়ে আসে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈচিত্র্যময় পোশাক। তাই চাইলেই কেউ রাঙাতে পারেন শরৎ এর রঙে। প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত। নাগরিক কোলাহল আর দৈনন্দিন ছকে বাধা জীবনের কর্মব্যস্ততার মাঝে ছুটির দিনে কিংবা অবসরে প্রিয়জনদের নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন নীল আকাশের মাঝে, যা নাগরিক জীবনে কর্মব্যস্ততা থেকে একটু হলেও স্বস্তি দেবে। ঝলমলে প্রাণবন্ত আকাশ যে কারও মন মুহূর্তেই ভালো করতে পারে। মেঘের রাজ্যে টুকরো টুকরো নীলকে হারিয়ে যেতে দেখবার জন্য এ শরৎ কাল সেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।