ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হলো না মাসুদ মিয়ার

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হলো না মাসুদ মিয়ার দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ইডিসিএল কর্মচারী মো.মাসুদ মিয়া

মাদারীপুর: গোপালগঞ্জ সদরের পাঁচুরিয়া এলাকার মো.মাসুদ মিয়া। সরকারি ওষুধ কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল) নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত আছেন।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়ে সুইটিকে পৌঁছে দিতে তাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকায়। এজন্য রোববার (১৯ মার্চ) ভোরে গোপালগঞ্জ থেকে উঠেছিলেন ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে। কিন্তু পথে দুর্ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও হারিয়েছেন মেয়ে সুইটিকে। এ ঘটনায় শোকে বিহব্বল মাসুদ মিয়া বাকরুদ্ধ। শিবচরের পাঁচ্চরে ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি জানান, ঢাবিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। সুইটি ঢাকার মিরপুরে একটি বাসায় ভাড়া থেকে ইংরেজি বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন।

তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হলো না, আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেল। আমি মরে গিয়ে যদি মেয়েটা বেঁচে থাকতো!’

জানা গেছে, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি বাগেরহাট, গোপালগঞ্জসহ পথিমধ্য কয়েক স্থান থেকে যাত্রী উঠায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। বেপরোয়া গতিতে বাসটি শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় বাসের ১৪ যাত্রী। শিবচর হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আরও ৩ জন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আরও ২ জন। মোট ১৯ যাত্রী এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লক কুমার হাজরাকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবে। আগামী দুই কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে দুর্ঘটনার মূল কারণ, কাদের গাফিলতি ছিল তা সহ বিস্তারিত অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নিহত ১৯ জনের সবারই পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ বিকেল ৩টার মধ্যে পরিবারের কাছে  হস্তান্তর করা হয়েছে। মের্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি গোপালগঞ্জে।

দুর্ঘটনা কবলিত বাস

পুলিশ ও শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি ঘরে রাখা হয়। বাকি দুজনের মরদেহ ঢামেক হাসপাতালে আছে। সবার পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।

তারা হলেন- গোপালগঞ্জে গোপীনাথপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া, বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোস্তাক আহমেদ, সদর উপজেলার নশর আলী শেখের ছেলে সজীব শেখ, পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ হোসেনের মেয়ে সুইটি আক্তার, টুঙ্গিপাড়ার কাঞ্চন শেখের ছেলে করিম শেখ, সদর উপজেলার আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি ও মুকসুদপুর এলাকার আমজেদ আলীর ছেলে মাসুদ আলী; খুলনার সোনাডাঙাশেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসূন ঘোষ, ডুমুরিয়ার পরিমল সাদুখার ছেলে মহাদেব কুমার সাদুখা, আমতলার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুর জাহান লিংকন; বাগেরহাট শহরের শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার; ফরিদপুরের হিদাডাঙ্গার সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন, নড়াইলের লোহাগড়ার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক জাহিদ হাসান, হেলপার মিরাজ এবং পাবনার সুজানগরের গহর আলীর ছেলে ইউসুফ আলী।

এছাড়া ঢামেক হাসপাতালে রয়েছে মিনহাজ বিশ্বাস (২২) ও শেখ আলী আকবরের (৭৫) মরদেহ। মিনহাজ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকদি গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে। আর আলী আকবরের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯,২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।