ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ময়মনসিংহের সেই শিশুর জন্য ৫ লাখ টাকা দিতে ১ মাস সময়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
ময়মনসিংহের সেই শিশুর জন্য ৫ লাখ টাকা দিতে ১ মাস সময়

ঢাকা: ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির জন্য আপাতত পাঁচ লাখ টাকা দিতে আরও এক মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সড়ক পরিবহন আইনের ৫৪ ধারা অনুসারে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (০৭ আগস্ট) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পক্ষে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মো. রাফিউল ইসলাম শুনানিতে ছিলেন।

গত ১৬ জুলাই ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতে ১৮ জুলাই আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।

গত ১৯ জুলাই ১৫ দিনের মধ্যে ওই ৫ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

রুলে ওই শিশুর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ট্রাক মালিক মঞ্জুরুল ইসলামকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরে সময় চেয়ে আবেদন করেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান।

আইনজীবী রাফিউল ইসলাম জানান, হাইকোর্ট আরও এক মাস সময় দিয়েছেন। এই এক মাসের মধ্যে ওই অর্থ শিশুটির আইনগত অভিভাবকের কাছে দিতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে।

ট্রাস্টি বোর্ড সম্পর্কে সড়ক পরিবহন আইনের ৫২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা, ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হইবেন।

৫৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ধারা ৫২ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অনুকূলে বা, ক্ষেত্রমত, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠিত হইবে।

(২) কর্তৃপক্ষ বিধি দ্বারা নির্ধারিত হারে ও পদ্ধতিতে মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে মোটরযানের শ্রেণি বিন্যাস বিবেচনাক্রমে প্রত্যেক মোটরযানের বিপরীতে আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য বাৎসরিক বা এককালীন চাঁদা (contribution) আদায় করিবে।

(৩) মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা (২) এর অধীন আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য বাৎসরিক বা এককালীন চাঁদা (contribution) প্রদানে বাধ্য থাকিবে।

৫৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ৫৩ তে উল্লিখিত আর্থিক সহায়তা তহবিল পরিচালনার উদ্দেশ্যে সরকার একজন চেয়ারম্যানসহ নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করিবে।

শিশুটির আত্মীয় স্বজনরা জানান, গত ১৬ জুলাই বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল ছয় বছরের শিশুকন্যা সানজিদা।

পরিকল্পনামতো ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ফিরছিলেন বাড়ির পথে। কিন্তু মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হঠাৎ বেপরোয়া একটি মালবাহী ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের।

তবে দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেটের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাকের চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ট হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্মের সময় নবজাতকের ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিক ওই নবজাতককে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসা। পরে রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত ছোটমণি নিবাসে শিশুটিকে স্থানান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।