ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ভাদ্র ১৪৩১, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্যাতন বন্ধে সরকারি হস্তক্ষেপ চান যৌনকর্মীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
নির্যাতন বন্ধে সরকারি হস্তক্ষেপ চান যৌনকর্মীরা

ঢাকা: যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ১০ দফা দাবিও জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য শ্রাবন্তী।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজে নারীরা অভাবের তাড়নায় এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতারিত হয়েই মূলত যৌন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়। এই পেশার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, সমাজই তার প্রয়োজনে এই পেশা সৃষ্টি করেছে। স্থান ও কালের ব্যবধানে ব্যবসার নিয়ম-নীতি পাল্টেছে, ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। তবে যৌন পেশার সঙ্গে জড়িতরা আজও রয়ে গেছে অবহেলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত৷ বার বার আন্দোলনের ফলে বর্তমানে যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য ও তাদের সন্তানদের শিক্ষা বিষয়ে খুব সামান্য ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে তাদের নিরাপদ কোনো আশ্রয় নেই। এখনো তারা আইনগতভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পদে পদে৷

গত ২৯ অগাস্ট এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওর কথা উল্লেখ করে সংগঠনটি আরও জানায়, ভিডিওতে দেখা যায় একজন যুবক শ্যামলীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের উপর নির্বিচারে নির্মমভাবে লাঠি পেটা করে। শুধু লাঠিপেটা নয় এই ভাসমান যৌনকর্মীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ভাইরাল ভিডিওটির কারণে একজন যৌনকর্মীর সন্তান ট্রমাটাইজড হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, এতে করে সন্তান ও মায়ের সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা, টানা-পোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রাবন্তী বলেন, শুধু শ্যামলী নয়, বিভিন্ন এলাকায় যৌনকর্মীদের একদল যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেমন যাত্রাবাড়ী, কোর্ট এলাকা, শ্যামলী, শহীদ মিনার, মিরপুর মাজার রোড, ফার্মগেট, আসাদগেট, উত্তরা, কুড়িল ও বাড্ডা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন যৌনকর্মীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে করে একাধিক যৌনকর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছে।

এ সময় তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন তিনি। সেগুলো হলো-

১. যৌন কর্মীদের ওপর নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. যৌন কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং দপ্তরের কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
৩. স্থানীয় প্রশাসনকে স্থানীয় ভাবে যৌনকর্মীদের সুরক্ষা দিতে হবে।
৪. ব্রথেল উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।
৫. পুলিশ দ্বারা যৌনকর্মীদের ওপর আইনের অপপ্রোয়গ বন্ধ করতে হবে।
৬. যৌনকর্মীদের সম্মানদের সুস্থ, নির্বিঘ্ন, মূল স্রোতধারার পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিতে হবে।
৭. যৌনকর্মীদের কবরস্থান এর জন্য কোনো পার্থক্য করা যাবে না। মূল স্রোত ধারা, সামাজিক ব্যবস্থায় কবরের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৮. যৌনকর্মীদের নির্বিঘ্ন জীবন যাপন এবং সার্বিক নিরাপত্তার প্রতি উপদেষ্টা মণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
৯. যৌনকর্মী নয় বরং মানুষ হিসেবে তাদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় নিপীড়ন এবং শোষণ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০. সকল ধরনের নারী নির্যাতন এবং যৌন হয়রানী বন্ধে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলি, সাধারণ সম্পাদক নিলুফা, সাবেক সভাপতি শাহনাজ, সদস্য শ্রাবন্তী, ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধি ইভানা কথা, বঞ্চিত নারী সংগঠন নেত্রী রানু প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।