ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

চলে এসেছে শরতের রানির ‘প্রতিনিধি’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
চলে এসেছে শরতের রানির ‘প্রতিনিধি’  চা বাগানের ছড়ার পাশে কাশফুলের গুচ্ছ। ছবি: বাংলানিউজ 

মৌলভীবাজার: প্রকৃতি যারা ভালোবাসেন তাদের দুর্বলতা হচ্ছে প্রকৃতিতে নতুন কিছু দেখলেই নিথর বা ভাবলেশহীন হয়ে তাকিয়ে থাকেন! কেউ কেউ তার গভীর উচ্ছ্বাসটি হজম করেন গোপনে। কেউ কেউ আবার উচ্চস্বরে অদ্ভুত শব্দের ভেতর দিয়ে প্রকাশ করেন উন্মাদনাটুকুও!

সে যা-ই হোক, প্রকৃতিতে নতুন কিছুর উপস্থিতি তাৎক্ষণিকের গভীর ভালো লাগা ফিরিয়ে আনে।

যে ভালো লাগায় জুড়ায় চোখ। ভরায় মন। কেননা, মানুষ আজ ক্রমনই যান্ত্রিক! দূরে সরে গেছে প্রকৃতির এই খাঁটি জিনিসগুলোর ধার থেকে। নতুন বা নতুনত্ব কিছুই নেই সেই কৃত্রিম জীবনে! কারো কারো কাছে জীবন একদমই একঘেঁয়ে! 

কারো কারোর ক্ষেত্রে আবার এমন প্রাকৃতিক জিনিসের প্রাপ্তিটুকু দুঃসাধ্য ব্যাপার।

যান্ত্রিক জীবনচক্রে হাঁপিয়ে উঠা এমন মানুষদের জন্যই তো প্রকৃতি। সতেজ সবুজ প্রকৃতি। যেখানেই রয়েছে ম্যাজিকযুক্ত ভালো লাগা! প্রকৃতি বরাবরই নতুন কিছুর প্রকাশ ঘটায়। তাৎক্ষিণের এমন উপস্থিতিতে আনন্দে নেচে উঠে মনপ্রাণ।  

সেই প্রকৃতিই এবার নিয়ে এসেছে শরতের রানির প্রতিনিধিকে। চা বাগানের নিস্তব্ধ জনপদের এক কোণে থোকা থোকা কাশফুল যেন দূরান্তের চাহনিতে মুখর। পাকা সড়ক বেয়ে এগিয়ে গেলে হঠাই চোখের সীমারেখায় ধরা পড়ে তাদের এমন সৌন্দর্যভরা রূপ। সবুজ প্রকৃতির বুকে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা রঙ একাকার হয়ে মিশে রয়েছে।  

‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা, নবীন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা’ -রবীন্দ্রনাথ তার প্রকৃতি পর্যায়ের গানে কাশফুলকে এভাবেই মর্যাদার স্থানে বসিয়েছেন। প্রাকৃতিক শরতের রানির আগমন মানেই কাশদের সম্মিলিত উপস্থিতি। কাশ ছাড়া শরৎ ঋতু যেন তার পূর্ণতাটুকু ফিরে পায় না।

কাশের বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum। এরা ঘাসজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। অনেকে একে ছন জাতীয় উদ্ভিদও বলে থাকেন। নদীর পাড়ে, চরাঞ্চলে, জলাভূমির ধারে বা পাহাড়ি ছড়ার ধারে এদের বিস্তৃতি রয়েছে। এরা অবহেলায় বেড়ে উঠা উদ্ভিদ। কোনো ধরনের যত্নআত্তির প্রয়োজন পড়ে না। সারা দেশেই রয়েছে কাশফুল।   

পাখি ডাকা চা বাগানের সকালে ছড়ার পাড়ের এই কাশফুলের দৃশ্য হৃদয় ভরিয়ে দেয়। কী সুন্দর সেই দৃশ্যপট। একদিকে টিলাঘেরা চা বাগান, অন্যদিকে প্রবাহিত ছড়ার পাড়ে কাশকন্যাদের দাঁড়িয়ে থাকা।  

চা বাগানের ছড়ার পাড়ে এমন কাশফুলের শোভায় পড়ন্ত বিকেলে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় জমে। তবে চা বাগানের পর্যটকের অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকায় অনেক পর্যটকই কাশের পাশে গিয়ে কাশফুল স্পর্শ করতে পারেন না।  

বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ুর প্রভাবে আমাদের প্রকৃতি যেন আজ ক্রমশই অচেনা হয়ে উঠছে। বাংলার প্রকৃতি আজ ধীরে ধীরে তার সৌন্দর্য রূপ বদলাচ্ছে। বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির বৃক্ষ, ফুল ও ফল। এমন কাশ সম্ভারই পারে বদলে যাওয়া প্রকৃতিকে পুনরায় সুসজ্জিত করে তুলতে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।