ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

শিয়রে ভোট, তাই কি বন্ধ পেঁয়াজ রপ্তানি!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
শিয়রে ভোট, তাই কি বন্ধ পেঁয়াজ রপ্তানি!

কলকাতা: এটা বাস্তব যে ভারতে গত কয়েকমাসের ঝড়বৃষ্টিতে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে ফসলী মাঠের এবং সংরক্ষণে থাকা পেঁয়াজের। তবে ভাঁড়ার শূন্য হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসেনি।

তারপরও হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা ভারতে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। যে পেঁয়াজ কলকাতার বাজারে গত ১৫ দিন আগে ১৮ থেকে ২০ রুপি ছিলো, সেই পেঁয়াজের কেজি এখন ৪০ থেকে ৪৫ রুপি।

তথ্য বলছে, ভারতের রাজনীতিতে পেঁয়াজের ঝাঁঝ সরাসরি ভোটের বাক্সে পড়ে। এ জন্য একবার কংগ্রেসকে খেসারতও দিতে হয়েছিল। হাত ছাড়া হয়েছিল পেঁয়াজের আঁতুড়ঘর মহারাষ্ট্র। একই হয়রানি গতবছর ঠিক এই সময় পোহাতে হয়েছিল মোদী সরকারকে। বিরোধীদের চাপে নাভিশ্বাস উঠেছিল সরকারের। তখনও আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় মোদী সরকার। শেষে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।  

গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ফের পেঁয়াজের ফলন ভালো হতে থাকলে এ বছরের মার্চে খুলে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক বাজার। কিন্ত এবারে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। প্রায় প্রতিবছরই অতি বৃর্ষায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এবারও তাই হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যায়নি। এমনটাই মত পেঁয়াজ চাষীদের।

তবে কেনো বন্ধ পেঁয়াজ রাপ্তানি? ভারতের বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের। তারমধ্যে সামনেই বিহার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং মধ্যপ্রদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচন। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গসহ আর কয়েকটি রাজ্যে ভোট। তার আগে পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যের খেসারত দিতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। সে কারণেই সম্ভবত কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সোমবার (১৪ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যা থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে মোদী সরকার।

মোদী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, ভারতের পেঁয়াজের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। ভবিষ্যতে খুচরা বাজারে এর আঁচ পড়বে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৫ রুপি ছাড়িয়েছে, যা জুলাইয়ের শেষেও ১৮ থেকে ২০ রুপি ছিল।

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের পেঁয়াজ চাষীদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাদের যুক্তি, যখনই চাষীরা একটু ভালো দাম পেতে শুরু করছিলেন, তখনই সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলো। ফলে মজুদ পেঁয়াজের দাম ফের পড়ে যাবে।

কিন্তু মোদী সরকার ভালো করেই জানে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারকাদের হাতিয়ার করে বিহার ভোটের বৈতরণী পার হওয়া মুশকিল। পাশাপশি মহারাষ্ট্রের উপনির্বাচন। ওয়াই নিরাপত্তা দিয়ে ভোট পার হওয়া মুশকিল। সেই জায়গা জনগণ আগে দেখবে হেঁসেলে টান পড়ছে কিনা! তাই সম্ভবত আগেভাগেই পেঁয়াজের দাম নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ সরকার!

তথ্য বলছে, ভারতে উৎপাদিত পেঁয়াজের বড় ক্রেতা বাংলাদেশ। রপ্তানির প্রায় ২৫ শতাংশই যায় বাংলাদেশে। এরপর মালয়েশিয়ায় ২০ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্য ও শ্রীলঙ্কায় ১৩ শতাংশ এবং নেপালে যায় ৪ শতাংশ। এছাড়া অবৈধভাবে পকিস্তানেও যায় ভারতীয় পেঁয়াজ। এ থেকে মোদী সরকারের আয় হয় ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। কিন্তু শিয়রে ভোট, তাই কি এমন সিদ্ধান্ত! প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক মহলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
ভিএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।