সিলেট: এবার মামলার আসামি হয়েছেন সিলেট রেঞ্জের সদ্য বদলিকৃত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও নাটোরের লালপুরের বাসিন্দা শাহ মিজান শাফিউর রহমান। সরকার বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে পুলিশের গাড়ি চাপায় যুবদল নেতা জিুলু আহমদ দিলু নিহত হওয়ার মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার এক বছর পর নিহতের ভাই গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মদন গৌরি গ্রামের ইলিয়াছ আলী এলাইছের ছেলে বুলু মিয়া বাদী হয়ে শনিবার (৩১ আগস্ট) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সদ্য বদলি হওয়া সিলেটের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও নাটোরের লালপুরের বাসিন্দা শাহ মিজান শাফিউর রহমানসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৪ নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০/১৫০ অভিযুক্ত করা হয়। ডিআইজি মিজান শাফিউর রহমানের বিরুদ্ধে সিলেটে এটাই প্রথম মামলা বলে জানা গেছে।
আলোচিত ডিআইজি মিজান শাফিউর রহমানকে ২১ আগস্ট ঢাকাস্থ রেলওয়ে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক হিসেবে বদলি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।
সিলেটে থাকার সময় তার বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের বিভিন্ন থানার ওসিদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেওয়া, চিনিসহ চোরাচালানের পণ্য থেকে অবৈধ আয়ের ভাগ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মামলায় ডিআইজিকে ৩ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে দক্ষিণ সুরমা থানার তৎকালীন ওসি শামসুদ্দোহাকে। এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা হলেন, দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি তদন্ত মো. আবুল হোসেন, এসআই লোকমান হোসেন, সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ওরফে ভিপি শামীম ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব বাবলু, সিসিক কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম শিপার।
আসামির তালিকায় আছেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান, মিয়া, গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ি ইউপি ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মজির উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লিটন হোসেন খান, দক্ষিণ সুরমা যুবলীগ সভাপতি ছদরুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নিজাম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল উদ্দিন রাসেল, ল কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ছমির উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমার তেতলী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম লাভলু, ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিদ হোসেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল মুকিত, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান, মাজেদ আহমদ মিটু, আবু তাহের, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দীন মো. ফয়ছল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি লাকী লোকমান, যুবলীগ নেতা সুহেল আহমদ, তেতলী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নিজামুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিসবাউল ইসলাম কয়েস।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন তার ভাই দিলু গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবেরোধ চলাকালে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজার এলাকায় পুলিশ ও সরকার দলের লোকজন হামলা, গুলি করে। দিলু মোটরসাইকেল নিয়ে স্থান ত্যাগ করার সময় পুলিশের গাড়ি পেছন দিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে মারধর করা হয়। সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অনিহা প্রকাশ করে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখায়। মামলার ভয় ও বাড়িঘর দখলের হুমকির কারণে মুখ খুলেননি দাবি করে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন অনুকুল পরিবেশ ফিরে আসায় তিনি মামলা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪
এনইউ/এএটি